কম বয়সি মেয়েদের কেন পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বেশি?
আগে সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস) দেখা যেত। এখন কম বয়সি মেয়েদের পিসিওএস বেশি দেখা যায়। আজ আমরা একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে পিসিওএস সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
এনটিভির নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রতিদিনের একটি পর্বে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম নিয়ে কথা বলেছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. খন্দকার শেহনীলা তাসনিম সুমি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পুষ্টিবিদ নুসরাত জাহান দীপা।
ডা. খন্দকার শেহনীলা তাসনিম সুমি বলেন, পিসিওএস মানে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম। কয়েকটি বিষয়ে সমন্বিত একটি হরমোনজনিত জটিলতা। এটা একটি হরমোন, যেখানে এন্ড্রোজেন বা ছেলেদের যে পুরুষালি হরমোনটা মেয়েদের শরীরে যতটুকু মাত্রায় থাকায় কথা, তার চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায় নিঃসৃত হচ্ছে। পাশাপাশি সেটি ওজন বৃদ্ধি করে দিচ্ছে। এর কারণে তার যে ডিম্বাশয়, আমরা জানি প্রতি মাসে একটি করে ডিম্বাণু সেখান থেকে নিঃসৃত হয়, কিন্তু পিসিওএসের ক্ষেত্রে এই ডিম্বাণু যেটি একটি করে নিঃসৃত হবে, তার সাথে অপরিণত ডিম্বাণুও আসে। পিসিওএস যখন হয়, তখন প্রত্যেকটি ডিম্বাণুই থাকে অপরিণত বা তারা কোনও ভাবেই পরিপক্ক হতে পারে না। একটা অপরিণত পর্যায়ে এসে থেকে যায়।
পরের মাসে আবারও তার কিছু ডিম্বাণু আসে। এভাবে ডিম্বাণুগুলো জমতে জমতে সেগুলো ছোট ছোট পানির আকারে বা অর্ধতরল টাইপের কিছু হয়ে ওভারিতে জমতে থাকে তার চারপাশে। তখন এটা ছোট ছোট হয়ে মালার মতো একটা সিস্ট আকারে... আমরা বলি সিস্ট, আসলে এটি পানিবাহিত। এটি পুরো ওভারিতে ধারণ করে। আস্তে আস্তে ওভারির রং পরিবর্তন হতে থাকে। ওভারি শক্ত হতে থাকে। এ জিনিসটি সমন্বিত হলে শরীরে কিছু পরিবর্তন আসে। দেখা যায় পুরুষালি হরমোন বেড়ে যাচ্ছে, সে জন্য অবাঞ্ছিত লোম গজাতে শুরু করে। মেয়েদের দেখা যাচ্ছে ঠোঁটের ওপরে, চোয়ারে নিচে, এসব জায়গায় এবং অন্যান্য জায়গাতেও লোম তৈরি হচ্ছে। তার পরে হচ্ছে যেটা, ওজন বাড়ছে অনেক বেশি।
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের লক্ষণ? ডা. খন্দকার শেহনীলা তাসনিম সুমি বলেন, অবাঞ্ছিত লোম, ওজন বৃদ্ধি, ব্রণ বৃদ্ধি, ঘাড়ের পেছনে কালো হয়ে যাওয়া এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা হয়, মেয়েদের মাসিক অনিয়মিত হওয়া শুরু করে। দুমাস-তিন মাস তার নির্দিষ্ট সময় থাকছে না। অনেক দিন পরপর হচ্ছে এবং হলে দেখা যাচ্ছে অনেক বেশি হচ্ছে বা একদম অল্প সময় থাকছে। এর সবগুলোর সমন্বয় মিয়ে পিসিওএস। যখন কোনও মেয়ে এ ধরনের সমস্যা নিয়ে আসে... আগে আমরা অ্যাডাল্ট মেয়েদের পেতাম, এখন রিপ্রোডাকটিভ এজে... আমাদের লাইফস্টাইলে যে চেঞ্জ হচ্ছে, সবকিছু মিলিয়ে আমরা অল্প বয়সি মেয়েদের কিন্তু এই রোগ পাচ্ছি। আধুনিক জীবনযাপন, আমাদের খাদ্যাভ্যাস, সবকিছু মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকছে না, নিয়মিত এক্সারসাইজ করছি না। ফলে এই জিনিসটার এত বেশি প্রাদুর্ভাব, সাউথ এশিয়ান রিজনে প্রতি পাঁচ জন মেয়ের মধ্যে এক জন এই পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে ভুগছে।
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম কী, এর লক্ষণ ও প্রতিকার বিশদে জানতে উপর্যুক্ত ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখুন।