বাজারের ব্যাগে করে মিজান ঘুষের টাকা দেন বাছিরকে
বরখাস্ত সাবেক ডিআইজি মো. মিজানুর রহমান বাজারের ব্যাগে করে দুদকের পরিচালক এনামুল বাছিরকে ঘুষের টাকা দেন বলে তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা অভিযোগপত্রে বলেছেন।
ফানাফিল্যা অভিযোগপত্রে বলেন, ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি একটি বাজারের ব্যাগে কিছু বইসহ ২৫ লাখ টাকা খন্দকার এনামুল বাছিরকে দেওয়ার জন্য আনেন ডিআইজি মিজান। তাঁরা সে দিন রমনা পার্কে আলাপ-আলোচনা করেন এবং আলোচনা শেষে উভয়ে রমনা পার্ক থেকে একত্রে বের হয়ে শাহজাহানপুর এলাকায় খন্দকার এনামুল বাছিরের কাছে ২৫ লাখ টাকাসহ ব্যাগ হস্তান্তর করেন। এরপরে খন্দকার এনামুল বাছির ব্যাগটি নিয়ে তাঁর বাসার দিকে চলে যান।
২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, ডিআইজি মো. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনের নথিমূলে অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয়। অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর খন্দকার এনামুল বাছিরের নামে হাওলা করা হয়। তিনি ওই বছরের ২৯ অক্টোবর অনুসন্ধানভার গ্রহণ করেন। অনুসন্ধান চলমান থাকাবস্থায় ২০১৯ সালের ৯ জুন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় এই মর্মে সংবাদ প্রচারিত হয় যে, ডিআইজি মো. মিজানুর রহমান দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে তার বিরুদ্ধে পরিচালিত অনুসন্ধান সংশ্লেষে বিভিন্ন সময়ে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ প্রদান করেছেন। এই বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের গোচরীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চ পর্যায়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি এনামুল বাছিরের বক্তব্য গ্রহণ করেন এবং পারিপার্শ্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করে খন্দকার এনামুল হক বাছির কর্তৃক ডিআইজি মিজানুর রহমানের থেকে ঘুষ লেনদের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরবর্তীতে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। অনুসন্ধানের সময় প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়ায় এই মামলা দায়ের করা হয়।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, মামলার তদন্তকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য গ্রহণ, এনটিএমসি হতে বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ ও পারিপার্শ্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ডিআইজি মো. মিজানুর রহমান ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি একটি বাজারের ব্যাগে করে কিছু বইসহ ২৫ লাখ টাকা খন্দকার এনামুল বাছিরকে প্রদানের জন্য এনেছেন মর্মে রমনা পার্কে উভয়ে আলাপ-আলোচনা করেন এবং এক পর্যায়ে আলোচনা শেষে তাঁরা উভয়ে রমনা পার্ক হতে একত্রে বের হয়ে শাহজাহানপুর এলাকায় খন্দকার এনামুল বাছিরের কাছে ২৫ লাখ টাকাসহ ব্যাগটি হস্তান্তর করেন। এরপরে খন্দকার এনামুল বাছির ব্যাগটি নিয়ে তাঁর বাসার দিকে চলে যান। একই ভাবে মো. মিজানুর রহমান ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি শপিং ব্যাগে করে ১৫ লাখ টাকা এনামুল বাছিরকে প্রদানের জন্য এনেছেন মর্মে রমনা পার্কে উভয়ে আলাপ-আলোচনা করেন এবং এক পর্যায়ে আলোচনা শেষে তাঁরা উভয়ে রমনা পার্ক হতে একত্রে বের হয়ে ডিআইজি মিজানের গাড়িতে করে শান্তিনগর এলাকায় খন্দকার এনামুল বাছিরের কাছে ১৫ লাখ টাকাসহ হস্তান্তর করলে ব্যাগটি নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে চলে যান।
ডিআইজি মো. মিজানুর রহমানের বডিগার্ড হৃদয় হাসান ও অর্ডারলি মো. সাদ্দাম হোসেন তদন্তকালে জানান যে, ডিআইজি মো. মিজানুর রহমান টাকাসহ ব্যাগ খন্দকার এনামুল বাছিরকে হস্তান্তর করেছেন মর্মে তারা চাক্ষুষ দেখেছেন এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে উভয়ের কথোপকথন শুনেছেন।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, তদন্তের সময় ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র ও এনটিএমসির বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন ও সাক্ষীদের বক্তব্য পর্যালোচনায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মো. মিজানুর রহমান এবং খন্দকার এনামুল বাছির উভয়ে বেআইনিভাবে দুটি পৃথক সিম ব্যবহার করে একে অপরের সাথে টেলিযোগাযোগসহ খুদে বার্তা গ্রহণ ও প্রেরণ করেছেন মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়।
এমনকি ডিআইজি মিজান এনামুল হক বাছিরের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে সংরক্ষণ করেছেন এবং পরবর্তীতে গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।
মামলার তদন্তকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, বিশেষজ্ঞ মতামত, প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের বক্তব্য, অডিও রেকর্ডে উভয়ের কথোপকথন ও পারিপার্শ্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করে প্রমাণিত হয় যে, ডিআইজি মিজান অভিযোগের দায় হতে বাঁচার জন্য অসৎ উদ্দেশ্যে উৎকোচ প্রদান করে খন্দকার এনামুল বাছিরকে প্রভাবিত করেছেন।