বইমেলায় কথাসাহিত্যিক অরুণ কুমার বিশ্বাসের ১০ বই
ভৌতিক ও রম্য লেখায় ইতোমধ্যে একটি নিজস্ব ধারা তৈরি করেছেন কথাসাহিত্যিক অরুণ কুমার বিশ্বাস। মূলত ডিটেকটিভ ও অ্যাডভেঞ্চার লিখে অভ্যস্ত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যে পড়েছেন। সেই সুবাদে আর্থার কোনান ডয়েল, এলান পো, আগাথা ক্রিস্টি কিংবা সিডনি শেলডনের লেখা অংসখ্য বই তিনি পড়েছেন। লেখালেখির শুরুটা পদ্য দিয়ে হলেও এখন তিনি গদ্য লিখছেন। যেন মনে মনে বলছেন, কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি। তার গোয়েন্দা চরিত্র অলোকেশ রয় একের পর এক রহস্য উদঘাটন করে চলেছে। তার উল্লেখযোগ্য গোয়েন্দা উপন্যাস জলপিপি, অমীমাংসিত খুন, কফিমেকার, অথই আঁধার, আলিম বেগের খুলি। আরও দুটো গোয়েন্দা চরিত্র আছে তার- কিশোরদের জন্য ডিটেকটিভ রোহান আর একেবারে ছোট্ট যারা তাদের জন্য গোয়েন্দা গুবলু।
রহস্য পত্রিকার নিয়মিত লেখক অরুণ কুমার বিশ্বাস জাতীয় বিভিন্ন দৈনিকে নিয়মিত কলাম ও রম্য লিখে নিজের একটি পাঠকশ্রেণি তৈরি করেছেন। শতাধিক বইয়ের লেখক অরুণ কুমার বিশ্বাসের এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে দশটি বই।
বইগুলো হলো অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে ‘জগু’, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে ‘সাইকোপ্যাথ’, আফসার ব্রাদার্স থেকে ‘ছায়াময় কুঠুরি’, ‘রক্তখেকো হিরের পুতুল’, ‘ভয়ঙ্কর পাঁচ’, ‘মাথামুণ্ডুর বিভীষিকা’, অক্ষরবৃত্ত থেকে ‘সায়ানের খুনি কে’, মূর্ধণ্য প্রকাশন থেকে ‘যেভাবে জয়ী হতে হয়’, বাবুই প্রকাশ থেকে ‘অন্ধকারে আগন্তুক’ ও পরিবার প্রকাশন থেকে ‘কবরে ভয়ঙ্কর’।
জগু
অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে ভৌতিক উপন্যাস ‘জগু’। কে এই জগু! প্রশ্নটা শুরু থেকেই তাকে ঘুণপোকার মতো কুরে কুরে খায়। মিলি এই ভেবে অবাক হয়, জগুর মতো সহজ সাধারণ একজন মানুষ এসব কাজ করতে পারলো! মিলিকে শুধু যে সে বাঁচিয়েছে তাই নয়, তাকে সে দিয়েছে নতুন আলোর খোঁজ। আবার ধরুন সুখের সাহার কথা বলা যাক- ব্যাংক থেকে তার প্রায় দশ লাখের মতো টাকা খোয়া যায়। কর্তৃপক্ষ বলছে টাকা তিনি নিজেই তুলেছেন, অথচ তার চেকবইয়ের একটা পাতাও আজ অব্দি ছেঁড়া হয়নি। জগু সুখেনকে কথা দিয়েছিল টাকাটা তাকে সে ফিরিয়ে দেবে। কথা রেখেছে জগু। রিটায়ার্ড বৃদ্ধ আনোয়ার হোসেন পেনশনের টাকা তুলে দিতে পারেননি বলে ছেলে ও ছেলেবউয়ের হাতে সমানে নিগৃহীত হন। খেতেঅব্দি দেয় না তাকে। এবার উপায়! উপায় আছে জগুর কাছে। সে মামুলি মানুষ, তাই বলে অথর্ব নয়। পেনশনের টাকা বুঝে পান আনোয়ার, সাথে ছেলেপুলের আনুগত্যও। মিলি বোঝে না, কোন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় জগু তাদের মানুষ করে তুলল! কেনই বা সে এসব করছে! তার ফায়দা কীসে! ওদিকে এই জগুই বৃষ্টির দিনে নিজের হাতঘড়ি বেচে সব টাকা তুলে দেয় বারবণিতাদের হাতে। কীসের মায়ায়- বুঝতে পারে না মিলি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুরাদকে জগু নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচায়, তাকে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখায়।
মিলি জগুকে জানতে চায়, বুঝতে চায়, কাছে টানতে চায়। অথচ জগু ওর দিকে ফিরেও তাকায় না। কিন্তু কেন? এই কেন-র উত্তর জানতে মিলি ফিরে যায় জগুর অতীতে- সেই কদর্য অতীত, জগু যা আর মনে রাখতে চায় না।
সাইকোপ্যাথ
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত ডিটেকটিভ উপন্যাস সাইকোপ্যাথের নায়ক অলোকেশ রয় এখন অস্ট্রেলিয়ান শহর মেলবোর্নে। সঙ্গে উর্বীও আছে। উদ্দেশ্য মূলত ক্রিমিনোলজির উপর পেপার উপস্থাপন করা হলেও এই শহরে পা দিতে না দিতেই তিনি এক ভয়ঙ্কর রহস্যের জালে জড়িয়ে যান। জঘন্য সিরিয়াল কিলার কেইন স্টুয়ার্ট ভিকটিমের শরীর অবশ করে ধারালো ক্ষুর দিয়ে তার নাক কেটে নেয়। ক্রাইম রিপোর্টার রিনি সেন ও সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটির সাইকোলজির প্রফেসর রিচার্ড কিম অলোকের সঙ্গে তদন্তে যোগ দেন। মধ্যরাতে কারো গোঙানির শব্দ শুনে তার ঘুম ভাঙে। দরজা খুলে দেখেন নাককাটা টনির প্রায় মরো মরো অবস্থা। নেশাজাতীয় ওষুধের কারণে স্মৃতি হারায় বেচারা টনি। সে তার নিজের নামটাও মনে করতে পারে না।
কিছুদিন পরে ইয়ারা নদীতে শহরের জনপ্রিয় কমেডিয়ান রিও’র লাশ পাওয়া যায়। একই কায়দায় তাকে খুন করা হয়েছে। মারবার আগে শিকারি কেটে নিয়েছে তার সুঁচালো নাক। সহসাই আরও একটি নাম সামনে এসে যায়- লুসি কাবেরি। একের পর এক অঘটনের ফলে নড়েচড়ে বসে মেলবোর্ন পুলিশ। চিফ কমিশনার গ্রাহাম অ্যাশটন বাহাত্তর ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন, নইলে তার চাকরি যায় যায়। বসের চাকরি বাঁচাতে ডিটেকটিভ অলোকের সঙ্গে মাঠে নামলেন বেলফিল্ড থানার চৌকস ইন্সপেক্টর গ্রোভার হুক। উর্বী আর লেডি কনস্টেবল জেসিকার কারণে নাককাটা কিলারের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যান দুঁদে ডিটেকটিভ অলোকেশ রয়।
যেভাবে জয়ী হতে হয়
মূর্ধণ্য থেকে প্রকাশিত বলা যায় ক্যারিয়ার গাইড ‘যেভাবে জয়ী হতে হয়’। সাফল্যের মাপকাঠি কী! কাকে তুমি সফল বলবে- যিনি রকেট সায়েন্সের আবিষ্কর্তা তিনি, নাকি যিনি তামাম দুনিয়ার লক্ষ কোটি মানুষের মনে সুখের সুবর্ণ বীজ বপন করে দিয়েছেন, সেই গৌতম বুদ্ধ! গ্রামের একজন সাধারণ মানুষ- যে কিনা জীবন কখনও জুতো পরেনি, রেস্তোরাঁয় গিয়ে একবেলা খায়নি, শ্যাম্পু কী জিনিস সে জানে না, পিৎজা-বার্গার বা আইসক্রিমও খায়নি একটু, নেটফ্লিক্সে সিনেমা দেখেনি, তাকে তুমি সফল বলবে? অথচ তার মনে তেমন কোনো দুঃখ নেই, সে বেশ আছে, মাঠে কাজ করে, রোদ-বৃষ্টি-জলে ভেজে, টেরি কেটে চুল বাঁধে, তারপর দিনান্তে দুটো শাক-ভাত মুখে দিয়ে মনের সুখে ভাটিয়ালি গান গায় বা সস্তা দামের বিড়ি ফোঁকে, তাকে কি তুমি অসফল বলতে পার! কখনো নয়।
এছাড়াও লেখকের আলোচিত বইগুলো হলো- অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘আলিম বেগের খুলি’, অনিন্দ্যপ্রকাশ থেকে ‘অথই আঁধার’, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে ‘ওরা ডিটেকটিভ’, তাম্রলিপি প্রকাশন থেকে ‘গোয়েন্দা রোহান’, শুদ্ধপ্রকাশ থেকে ‘লাল বিলুর কাণ্ডকীর্তি’, কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘হানাবাড়ি খুনরহস্য’, ও ‘কালোচিতার প্রেতাত্মা’, অর্জন প্রকাশ করেছে ‘ট্যাঙ্কিতে কালো ভূত’, মূর্ধণ্য থেকে ‘তেল ও আঁতেল’, কারুবাক থেকে ‘ফাইটার বুড়ো’, ঝিঙেফুল থেকে ‘শঙ্কুর বিজয় নিশান’, পাঠক সমাবেশ থেকে ‘নীল দুশমন’ ও আগামী প্রকাশনী থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প’ ইত্যাদি।
এবারের বইমেলা নিয়ে অরুণ কুমার বিশ্বাস এনটিভি অনলাইনকে সোমবার বলেন, এটা ভালো খবর যে বইমেলা ১৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রকাশকরা গত দুই বছরের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন। আবার পাঠকরাও তাদের চাহিদা মেটাতে বই কেনার সময় পেলেন। মেলার শুরু থেকে এবার যেভাবে পাঠকদের উপস্থিতি দেখেছি, তাতে শেষ পর্যন্ত মেলা ভালোই জমবে বলে আশা করছি।