ইউক্রেনে চলছে রুশ হামলা, দেশ ছেড়েছে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ
ইউক্রেনজুড়ে সর্বাত্মক হামলা অব্যাহত রেখেছে রুশ বাহিনী। রাজধানী কিয়েভসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো ঘিরে রেখেছে তারা। প্রতিরোধ গড়ছে ইউক্রেনের সেনারাও। চলমান পরিস্থিতিতে তৈরি হয়েছে চরম মানবিক সংকট। যুদ্ধপীড়িত দেশ ছেড়েছে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
যুদ্ধের ১১তম দিনে আজ ইউক্রেন। রাজধানী কিয়েভ, উত্তর-পশ্চিমের ইরপিন, দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নগরী খারকিভ, উত্তরের চেরনিহিভ এবং উত্তর-পূর্বের সুমি শহর ঘিরে রেখেছে রুশ সেনারা।
ক্ষেপণাস্ত্র আর রকেট হামলা হচ্ছে দফায় দফায়। হামলা হচ্ছে আকাশ থেকেও। ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় চেরনিহিভে রুশ যুদ্ধবিমান থেকে ফেলা বোমায় পুড়ছে বাড়িঘর। ইউক্রেন সেনাদের পাল্টা হামলা রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার খবরও মিলছে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে এখানে পড়েছে। সেটি মিগ টুয়েন্টি নাইন বা সু-থার্টি হতে পারে। আমি খুব কাছ থেকে দেখছিলাম রুশ উড়োজাহাজটি ভূপাতিত হওয়ার দৃশ্য। বিধাতাকে অশেষ ধন্যবাদ, আমরা বেঁচে আছি। সব ঠিক আছে।’
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমরা বাড়ির বেসমেন্টে ছিলাম। তাই, প্রাণে বেঁচে গেছি।’
কিয়েভ উপকণ্ঠে বোরোদিয়াঙ্কা শহরের একটি হাসপাতাল দখল করেছে রুশ বাহিনী। দক্ষিণের বন্দরনগরী মিকোলেইভের দিকে এগোচ্ছে তারা। শহরটি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলে বন্দরনগরী ওডেসা দিকে এগোবে।
এদিকে, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় দুই শহর—মারিউপোল ও ভলনো-ভাখায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেও কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তা বাতিল করায় তৈরি হয়েছে মানবিক সংকট।
একদিকে, টানা হামলা চলছে। অন্যদিকে, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে মারিউপোল। ভলনোভাখার শহরেও প্রায় প্রতিটি ভবন হয় ধ্বংস, না হয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকা লাশ উদ্ধারও করা যাচ্ছে না।
বিদেশি ও বেসামরিক নাগরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করছে রাশিয়া। খারকিভেই সাড়ে সাত হাজারের বেশি বিদেশি নাগরিককে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ জিম্মি করেছে বলে জানিয়েছে রুশ প্রতিরক্ষা কমান্ড।
এ ছাড়া বহু রুশ নাগরিক রাশিয়া ছেড়ে ফিনল্যান্ডে চলে যাচ্ছেন এবং এ যুদ্ধে পশ্চিমারা যোগ দিলে রাশিয়ায় মার্শাল ল ঘোষণা করা হতে পারে—পশ্চিমা গণমাধ্যমের এমন খবর উড়িয়ে দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেন, ‘মার্শাল ল বা বিশেষ জরুরি অবস্থা জারির কোনো পরিকল্পনা নেই। এমন সিদ্ধান্তের জন্য পার্লামেন্টের অনুমোদনও লাগে। তবে পশ্চিমারা যুদ্ধ ঘোষণা করলে ভিন্ন পরিস্থিতি হতে পারে, যা আমি আশা করি না।’
এদিকে, শনিবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কথা বলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বাইডেন জেলেনস্কিকে জানিয়েছেন, রাশিয়া এবং এর ধনকুবেরদের ওপর নতুন করে আরও নিষেধাজ্ঞা আসছে।
এর পরপরই পেমেন্ট জায়ান্ট ফার্ম ভিসা ও মাস্টারকার্ড রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
অন্যদিকে, তিন হাজার মার্কিনি ইউক্রেনে গিয়ে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়াতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে মার্কিন গণমাধ্যমের খবর।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘আমাদের জনগণ প্রতিরোধ থেকে সরে যাবে না। দখলদারদের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তাদের বাড়ি ফিরে যেতে বলছে। তাদের পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে।’
জাতিসংঘ বলছে, যুদ্ধ থেকে বাঁচতে গত ১০ দিনে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ পোল্যান্ড, মলদোভা, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, রোমানিয়াসহ ইউরোপের দেশগুলোতে চলে গেছে। প্রিয় শিশু সন্তান, স্ত্রী, বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে দেশ ছাড়তে বাসে-ট্রেনে তুলে দিয়ে তরুণ ও যুবকেরা দাঁড়াচ্ছেন যুদ্ধের ময়দানে।