হত্যার দেড় যুগ পর কুমিল্লা কারাগারে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর
চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর শফিউদ্দিন হত্যায় দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ১৮ বছর পর গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় কুমিল্লার কেন্দ্রীয় কারাগারে দণ্ডপ্রাপ্ত শিপন হাওলাদার ও নাইমুল ইসলাম ইমনের ওই রায় কার্যকর হয়। সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শিপন ও ইমনের ফাঁসি কার্যকরের সময় উপস্থিত ছিলেন—জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসেনসহ সংশ্লিষ্টরা।
নিহত শফিউদ্দিন বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী-১ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী ছিলেন। ২০০৩ সালের ১৪ জুন নগরীর খুলশীর উত্তর আমবাগান রেলওয়ে কোয়ার্টারের বাসায় ঢুকে ঘাতকরা শফিউদ্দিনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করে বোমা ফাটিয়ে এলাকা ত্যাগ করে ঘাতক দল।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মাহমুদা বেগম বাদী হয়ে খুলশী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার অভিযোগপত্র ও কারাগার সূত্রে জানা যায়, শফিউদ্দিন রেলওয়েতে নির্ধারিত দায়িত্বের পাশাপাশি আমবাগান এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মদ, জুয়া ও রেলওয়ের অবৈধ সম্পদ দখলের প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন। তাঁর অবস্থানের কারণে রেলওয়ের জায়গা থেকে চার দফায় অবৈধ বস্তি ও কলোনি উচ্ছেদ করতে বাধ্য হয় প্রশাসন।
এ সব ঘটনার জেরে সন্ত্রাসীরা শফিউদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরে ২০০৩ সালের ১৪ জুন সরকারি বাসায় ঢুকে তাঁকে গুলি করে ও কুপিয়ে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।
২০০৪ সালের ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২৩ জনের সাক্ষ্য নিয়ে এ হত্যা মামলায় দুই ঘাতক শিপন ও ইমনকে ফাঁসি, সাত আসামিকে যাবজ্জীবন এবং চারজনকে খালাস দেন। সাজার বিরুদ্ধে আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করে। কিন্তু, ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত রিভিউ খারিজ করে দেন। সর্বশেষ চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করা হলেও তা খারিজ হয়ে যায়।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ জানান, উচ্চ আদালতে ফাঁসির সাজা বহাল রাখা এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে কারাবিধি অনুসারে ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার এ রায় কার্যকর করা হলো।
শাহজাহান আহমেদ আরও জানান, কারাবিধি অনুসারে কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই দুজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। ফাঁসি কার্যকরের আগে উভয়ের পরিবারের লোকজন তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছেন। ফাঁসি কার্যকরের পর রাতেই মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।