ময়মনসিংহে ধর্ষণের পর কিশোরী হত্যা, পরিকল্পনাকারী গ্রেপ্তার
ময়মনসিংহে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আপন ভাইকে ফাঁসাতে গাজীপুর থেকে এক কিশোরীকে এনে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। সেই ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত এবং পরিকল্পনাকারী আব্দুর রাজ্জাককে (৬০) গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এক ই-মেইল বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম।
মো. শফিকুল ইসলাম জানান, গতকাল বুধবার বিকেলে গাজীপুর জেলার গাছা থানা এলাকা থেকে আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া আব্দুর রাজ্জাক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে তার দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তার বাড়ি ধোবাউড়া উপজেলার টাংগাটি মধ্যপাড়া এলাকায়। তিনি গাজীপুরে গাছা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। সেখানে নিজেকে সংবাদকর্মী, হারবাল ওষুধের কবিরাজসহ নানা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতেন।
মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গার্মেন্টসে চাকরি করার সুবাদে গাজীপুর জেলার গাছা থানা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকত নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার মো. দুলাল মিয়ার মেয়ে রিভা আক্তার (১৫)।
পাশাপাশি ভাড়া বাসায় থাকার সুবাদে কিশোরী রিভার সঙ্গে আব্দুর রাজ্জাকের পরিচয় হয়। রিভার কাছে রাজ্জাক নিজেকে সংবাদকর্মী পরিচয় দেন। পরে রিভাকে সংবাদকর্মী বানানোর প্রলোভনে দুই মাস আগে বিয়ে করেন। রিভা তার চাকরি ও স্ত্রীর মর্যাদা পেতে সম্প্রতি রাজ্জাককে চাপ দেন। এতে রাজ্জাক ক্ষিপ্ত হয়ে রিভাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, রাজ্জাকের সঙ্গে তার ভাই আমিনুল ইসলামের পৈতৃক জমি নিয়ে বিবাদ চলে আসছিল। সেই জমি হাতিয়ে নিতে ও রিভার চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে ভাই আমিনুলকে রিভা হত্যা মামলায় ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেন রাজ্জাক। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী রিভাকে হত্যা করার জন্য আমিনুলের সঙ্গে বিরোধ আছে এমন দুজনকে খুঁজে বের করেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১৪ মার্চ বেলা ১১টার দিকে তিনি রিভাকে নিয়ে গাজীপুর থেকে নিজ এলাকায় আসেন। দিনভর ঘোরাফেরা করে সন্ধ্যায় ধোবাউড়া গোয়াতলা কংস নদের কাছে পৌঁছেন তারা। সেখানে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রিভাকে অপর দুই সহযোগীর হাতে তুল দেন রাজ্জাক। ওই দুজন রিভাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন। পরে আব্দুর রাজ্জাকসহ তিনজন মিলে রিভার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করেন। এরপর তিনজনে মিলে রিভার মরদেহ আমিনুলের বাড়ির কাছে ধানক্ষেতে ফেলে রাখেন।
ওসি আরও জানান, রিভার মরদেহের প্যান্টের পকেটে আমিনুল ইসলামের ছেলে শহিদুল্লাহর জন্মনিবন্ধন, রিভার জন্মনিবন্ধন ও রিভার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন রেখে আসামিরা সেখান থেকে পালিয়ে যান। পরের দিন মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সকালে রিভার মরদেহ ধানক্ষেতে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা ধোবাউড়া থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রিভার মরদেহটি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় গতকাল ধোবাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়।