শুভ জন্মদিন বাংলাদেশের প্রাণ—সাকিব আল হাসান
একবার যে বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের জান, বাংলাদেশের প্রাণ, সাকিব আল হাসান—তাতে কিন্তু বাড়াবাড়ি ছিল না। বরং দেশব্যাপী খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এ লাইনটি। সত্যিকার অর্থে তা-ই। ক্রিকেটপ্রেমে বুঁদ হয়ে থাকা বাংলাদেশিদের জন্য সাকিব আল হাসান তেমনই এক চরিত্র।
নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার সাকিব। বিশ্বসেরা ক্রিকেটারদেরও একজন তিনি। দীর্ঘ ১৬ বছর বিশ্ব ক্রিকেটে দাপিয়ে বেড়ানো মহাতারকার জন্মদিন আজ। ১৯৮৭ সালের এই দিনে পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন তিনি। আজ তাঁর ৩৫তম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন সাকিব আল হাসান।
১৯৮৭ সালের ২৪ মার্চ মাগুরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন সাকিব। বাবা মাশরুর রেজা ছিলেন কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা। তিনি ছিলেন ফুটবলের ভক্ত। তাই চেয়েছিলেন ছেলে বড় হয়ে ফুটবলার হোক। কিন্তু, ক্রিকেটের আজকের দেশসেরা তারকা ফুটবলার না হয়ে, হয়েছেন ক্রিকেটার। মাগুরার দুরন্ত ছেলেটি গ্রামাঞ্চলের ক্রিকেট খেলেই নজর কাড়েন এক আম্পায়ারের। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে আসা হয় মাগুরার ইসলামপুরপাড়া ক্লাবে। সেখানে আসার পর আর পেছনে ফিরে তাঁকাতে হয়নি তাঁকে।
এক পা, দুই পা করে সেই ছোট্ট সাকিব হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের প্রাণ। হয়ে উঠেছেন ক্রিকেটের পোস্টার বয়, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
বাংলাদেশের জার্সিতে সাকিবের অভিষেক হয় ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট, ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে। মাত্র ১৯ বছর বয়সে অভিষেক হওয়া সেই তরুণের দৃষ্টির সীমারেখা যে এত দূর বিস্তৃত ছিল, কে জানত তখন! সময়ের সঙ্গে সাকিব বুঝিয়ে দিয়েছেন—কেন তিনি সবার সেরা।
ওয়ানডে অভিষেকের তিন মাস পরেই পা রাখেন টি-টোয়েন্টিতে। এর পরের বছর ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক। এরপর ধীরে ধীরে সেরাদের সেরা হয়ে ওঠা। ২০০৯ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে অলরাউন্ডার হিসেবে র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ওঠেন সাকিব। এরপর টেস্টেও সেরা অলরাউন্ডারের আসন দখল করেন।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিন ফরম্যাটেই সেরা অলরাউন্ডার হন সাকিব। এ ছাড়া দেশের জার্সিতে আরও বহু রেকর্ড নিজের করে নেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। আজকাল তিনি মাঠে নামলেই জন্ম দেন নতুন নতুন রেকর্ডের। পোস্টার বয় থেকে সাকিবকে বলা যায় রেকর্ড বয়ও। কারণ সাকিব ব্যাট হাতে ঝড় তুললেও হয় নতুন রেকর্ড, বল হাতে হাত ঘোরালেও হয় নতুন রেকর্ড।
২০০৬ সাল থেকে খেলে আসা সাকিব ৫৯ টেস্ট খেলে ৩৯.৫০ গড়ে করেছেন ৪,০২৯ রান। যার মধ্যে আছে পাঁচটি সেঞ্চুরি ও ২৬টি হাফ সেঞ্চুরি। সাদা পোশাকে তাঁর সর্বোচ্চ ইনিংস ২১৭ রানের। বল হাতে ৯৯ ইনিংসে বল করে পেয়েছেন ২১৫টি উইকেট। বোলিং গড় ৩১.৩০ ও ইকোনমি ২.৯৮ করে। ১০ উইকেট পেয়েছেন দুবার। পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ১৮ বার। এক ম্যাচে তাঁর সেরা বোলিং ফিগার ১২৪ রানে ১০ উইকেট। আর, এক ইনিংসে ৩৬ রানের বিপরীতে সাত উইকেট।
ওয়ানডেতে ২২১ ম্যাচে ব্যাট হাতে ৩৭.৭৩ গড়ে ছয় হাজার ৭৫৫ রান করেছেন। যার মধ্যে নয়টি সেঞ্চুরি ও ৫০টি হাফসেঞ্চুরি। এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রান ১৩৪ (অপরাজিত)। আর ২১৮ ইনিংসে বল করে ২৯.৪৭ গড় ও ৪.৪৪ ইকোনমিতে নিয়েছেন ২৮৫ উইকেট। এক ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন তিন বার। সেরা বোলিং ফিগার ২৯ রানে পাঁচ উইকেট।
এ ছাড়া ৯৬টি টি-টোয়েন্টিতে এক হাজার ৯০৮ রান করেছেন সাকিব। এর মধ্যে আছে নয়টি হাফসেঞ্চুরি। আর ৯৫ ইনিংসে বল করে নিয়েছেন ১১৯ উইকেট, ইকোনমি ৬.৬৭। সেরা বোলিং ফিগার ২০ রানের বিনিময়ে পাঁচ উইকেট।