নাশকতার মামলা : সাবেক সাংসদ মঞ্জুসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন
খুলনায় সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলায় অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার খুলনার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত এ অভিযোগ গঠন করেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক, এসএম মঞ্জুর আহম্মেদ ও মোল্লা গোলাম মওলা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ১৯৭৪ সালের স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্টের ১৫(৩)/২৫-ডি ধারায় এ অভিযোগ গঠন করা হয়েছে বলে জানান তাঁরা।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে খুলনার কেডিএ অ্যাভিনিউ তেঁতুলতলা মোড়ে নাশকতা সৃষ্টির জন্য সমবেত হন আসামিরা।
শেখপাড়ার কে ভি উপকেন্দ্র, ডিভিশন-১ (কেপিআই) ও বাংলাদেশ বেতারের খুলনা ভবন ধ্বংসসহ খুলনাকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে সরকারকে বিব্রত করার উদ্দেশ্য ছিল তাঁদের।
ওই সময় এ মামলার আসামিদের হাতে বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক অস্ত্র, লোহার রড, বাঁশের লাঠি এবং ইটের টুকরো ছিল। তাঁরা ল্যাম্পপোস্টের আলোয় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান।
আইনজীবীদের সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় এসআই উজ্জ্বল সরকার বাদী হয়ে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় সাত জনের নাম উল্লেখসহ আরও ১৪০/১৫০ জনকে অজ্ঞাত করে মামলা করেন।
যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, তাঁরা হলেন—বিএনপির কেন্দ্রীয় অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগর শাখার সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বিএনপি নেতা মো. সাজ্জাদ আহসান পরাগ, মো. সাইফুল ইসলাম বকশী, জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম পান্না, এসএম জাহাঙ্গীর আলম, মো. বাকার বকশী, মো. ফরহাদ বকশী, আবুল কালাম আজাদ, মো. আসলাম, আব্দুর রহিম চৌধুরী হেলাল, আব্দুল মজিদ গাজী, মোল্লা মাসাদুর রহমান, এম আকরাম হোসেন মোল্লা, কাজী নূর মোহাম্মদ নূর, সৈয়দ শামীম আহসান, শেখ মাহবুবুর রহমান রতন, মো. বায়জীদ ও অহিদুল ইসলাম।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) হরষিৎ ২০১৯ সালের ২৭ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র আমলে নেন আদালত। কয়েক দফায় বিচারক বদলির পর গতকাল মঙ্গলবার অভিযোগপত্র গঠনের মধ্য দিয়ে মামলাটির বিচার কাজ শুরু হয়।
অভিযোগপত্র শুনানিতে আসামিপক্ষে অংশ নেন অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক, এসএম মঞ্জুর আহম্মেদ, মোল্লা গোলাম মওলা, লস্কর শাহ আলম, বেগম আক্তার জাহান রুকু, মো. আছাদুল আলম, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. ওমর ফারুক রনি ও অ্যাডভোকেট মো. কামাল হোসেন।
এ সম্পর্কে খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কল্পকাহিনী সাজিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক এসব মামলার ভিত্তি নেই। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা থাকলে চার্জগঠনের পূর্বেই মামলাটি নিষ্পত্তি হয়ে যেত। ফ্যাসিস্ট সরকার পুলিশ তথা রাষ্ট্রকে অপব্যবহারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তই হলো এসব মামলা দায়ের, চার্জগঠন ও বিচারের নামে প্রসহন। এটা বিরোধী দলমতের নেতাকর্মীদের হয়রানি ছাড়া কিছুই না।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৯ ডিসেম্বর খুলনা নগর ও জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। ঘোষিত এ কমিটির সমালোচনা করে প্রেসব্রিফিং করেন সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু। এরপর গত ২৫ ডিসেম্বর দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে মঞ্জুকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।