দন্ত্যচিকিৎসক বুলবুল হত্যা, আরও দুই ছিনতাইকারীর দোষ স্বীকার
রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় ছুরিকাঘাতে ডা. আহমেদ মাহী বুলবুল হত্যার ঘটনায় রিমান্ডে থাকা আরও দুই ছিনতাইকারী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আজ বুধবার ঢাকার পৃথক দুই মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে দুই আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবাবন্দি দেন।
আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) মোহাম্মদ জালাল বিষয়টি এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করে বলেন, আজ আরও দুই আসামি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দিতে সম্মত হওয়ায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর জোনাল টিমের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন আসামিদের হাজির করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে আসামি আরিফ এবং আরেক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদীর আদালতে রাসেল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জিআরও আরও বলেন, গত ৩১ মার্চ ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম চার আসামিকে চার দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন। রিমান্ডকৃত আসামিরা হলেন-মো. রায়হান সোহেল (২৭), মো. রাসেল হোসেন হাওলাদার (২৫), মো. আরিয়ান খান হৃদয় (২৩) ও সোলায়মান (২৩)। এর মধ্যে শেষের দুইজন গত ৩ এপ্রিল স্বীকারোক্তি দেন। বাকি দুই জন আজ স্বীকারোক্তি দিলেন। তাদের সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত ৩০ মার্চ অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের মিরপুর জোনাল টিম মিরপুর, পল্লবী ও সাভার থেকে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করে। অভিযানে তাদের কাছ থেকে চিকিৎসকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোরা উদ্ধার করার কথা জানায় ডিবি।
গত ২৯ মার্চ রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, এর আগে গ্রেপ্তারকৃত মো. রায়হান সোহেলকে (২৭) ডিবি মিরপুর বিভাগের মিরপুর জোনাল টিম ২৭ মার্চ একটি ডাকাতির প্রস্তুতি মামলায় গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মার্চের ২৭ তারিখ আনুমানিক ভোর ৪টায় গ্রেপ্তার হওয়া চারজনসহ মোট পাঁচ জন আসামি পশ্চিম কাজীপাড়ায় বেগম রোকেয়া সরণিতে ডাকাতির উদ্দেশ্যে জড়ো হয়। আসামিরা প্রত্যেকেই পেশাদার ছিনতাইকারী। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তবে এ মামলাটিতে নতুন করে যুক্ত হবে ডাকাতির ঘটনা। এর আগে হত্যা মামলা করা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘বুলবুল আহমেদ (৩৯) পেশায় একজন দন্ত্যচিকিৎসক ও প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার। তিনি গত ১৫ থেকে ২০ দিন আগে নোয়াখালী এলাকায় একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ পান। চলতি মাসের ২৭ তারিখ সকাল আনুমানিক ৫টা ১৫ মিনিটে নোয়াখালী যাওয়ার উদ্দেশে পশ্চিম শেওড়াপাড়ার আনন্দবাজার এলাকা থেকে শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশে রিকশায় রওনা হন। ভোর আনুমানিক সাড়ে ৫টায় পশ্চিম কাজীপাড়ায় বেগম রোকেয়া সরণিতে নাভানা ফার্নিচার শোরুম ও গ্রামসিকো ফার্নিচার শোরুমের সামনে পৌঁছালে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা রিকশার গতিরোধ করে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গতিরোধ করে চিকিৎসকের কাছে থাকা ব্যবহৃত স্যামসাং মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে ডা. বুলবুল বাধা দিলে আসামিরা তাঁকে ধারালো ছোরা দিয়ে তাঁর ডান হাঁটুর উপর আঘাত করে গুরুতর জখম করে। সে সময় তাঁর মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে বিহঙ্গ বাসের চালক ও হেলপারের সহযোগিতায় ডাক্তারকে প্রথমে স্থানীয় আল-হেলাল হাসপাতাল ও পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে অন্য কোনো বিষয় জড়িত আছে কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। ওই চিকিৎসক একজন মানবিক মানুষ ছিলেন বলে আমরা জেনেছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা চিকিৎসকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলব। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে নানাদিক খতিয়ে দেখব। এ ছাড়া সামনে রমজান ও ঈদ আসছে। এ সময় সাধারণত ছিনতাইকারী বা ডাকাতেরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। আমরা এসব বিষয়ে নজর রাখছি। আমাদের মনিটরিং আরও বাড়ানো হবে।’