চাকরির প্রলোভনে ঢাকায় নিয়ে নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায়
চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ঝালকাঠির এক কলেজছাত্রকে ঢাকায় নিয়ে নির্যাতন করে, একটি চক্র পরিবারের কাছ থেকে ৫০ হাজার মুক্তিপণ আদায় করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নির্যাতনের সময় ওই কলেজছাত্রের অশ্লীল ছবি তুলে রেখে দেয় অপহরণকারীরা। আইনের আশ্রয় নিলে সে ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে বলে দেওয়া হয় হুমকি।
নির্যাতনের শিকার সরোয়ার রাব্বিকে (১৯) ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার বিচার দাবি করেছে নির্যাতিত ওই যুবকের পরিবার। রাব্বি ঝালকাঠি শহরের চাঁদকাঠি এলাকার মো. শাহজালালের ছেলে।
সরোয়ার রাব্বির স্বজনেরা জানান, ঝালকাঠি সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন রাব্বির। বাবার ওয়ার্কশপ ব্যবসায় যা আয় হয়, তা দিয়েই চলে তাঁদের সংসার। এইচএসসি পাসের পর থেকে রাব্বির মাথায় চাকরির চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে।
দুই মাস আগে ঢাকার গাজীপুর এলাকার সাকিব হাসান নামে এক যুবকের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় রাব্বির। ফেসবুকে পরিচিত সাকিব হাসান রাব্বিকে ৩০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি দেওয়ার কথা বলেন।
চাকরির প্রলোভনে পড়ে গত ৭ এপ্রিল রাব্বি ঢাকায় আসেন। সাকিবের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী ৮ এপ্রিল গাজীপুরের টঙ্গীতে একটি জরাজীর্ণ ভবনের সামনে গেলে রাব্বিকে ছয় যুবক অপহরণ করে ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখে।
পরে মুঠোফোনে রাব্বির বাবার কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে নির্যাতন চালানো হয়। ইলেকট্রিক শক, লোহার রড দিয়ে আঘাত, দেয়ালের সঙ্গে মাথায় আঘাত করা হয় রাব্বিকে।
অভিযোগসূত্র বলছে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাব্বিকে নানা কায়দায় নির্যাতন করা হতো। পাশাপাশি অশ্লীল ছবি তুলে রাখে ওই চক্রটি। এ ঘটনা কাউকে জানালে ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে ভাইরাল করা হবে বলে ভয় দেখানো হয়। একপর্যায়ে তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
পরে রাব্বিকে দিয়ে ফোন করিয়ে অপহরণকারীরা তাঁর বাবার কাছে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে এক ঘণ্টার মধ্যে খুনের হুমকি দেওয়া হয়।
রাব্বির বাবা অপহারণকারীদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে মুক্তিপণের টাকা পাঠান। টাকা পেয়ে অপহরণকারীরা রাব্বিকে গাজীপুর বাসস্ট্যান্ডে ছেড়ে দেয়।
সেখান থেকে ৯ এপ্রিল ঝালকাঠির বাড়িতে আসলে গতকাল রোববার রাব্বিকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
দেখা গেছে, ঘটনার পর থেকে ওই ফেসবুক আইডি ও বিকাশ নম্বর বন্ধ রয়েছে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, ছেলেটির শরীরে বৈদ্যুতিক শকের অনেক পোড়া ক্ষত রয়েছে। তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। আমরা তাঁকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছি।
ছেলের নির্মম নির্যাতনের বিচার দাবি করেছেন রাব্বির বাবা মো. শাহ জালাল ও মা নাজনিন বেগম। তাঁরা এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন।
ঝালকাঠি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান জানান, নির্যাতিত ছেলেটির জন্য তাঁর পরিবার চাইলে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।