নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো দলকে ফোর্স করা সম্ভব না : সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনে কে অংশ নেবে আর কে নেবে না, সে বিষয়ে ফোর্স করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না।
আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে ইসির চতুর্থ ধাপের সংলাপ অনুষ্ঠান হয়। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান নির্বাহীসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের নিয়ে আয়োজিত সংলাপ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কথা বলেন। এর আগে শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে তিন দফায় বৈঠক করে ইসি।
বৈঠক শেষে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনে কে অংশ নেবে আর কে নেবে না, সে বিষয়ে ফোর্স করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তবে দায়িত্ব থাকবে আহ্বান করা, আপনারা আসেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনে অংশ না নিলে কিন্তু গণতন্ত্র বিকশিত হবে না। গণতন্ত্র বিকশিত হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। সবাইকে চেষ্টা করতে হবে, একটা সুন্দর গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য।’
আমরা অর্থহীন সংলাপ করছি না উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘সংলাপে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে কথা এসেছে। আমরা এরইমধ্যে এটি নিয়ে কয়েকটি মিটিং করেছি। যেহেতু বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু ইভিএমের যে সুবিধাটা সেখানে পেশিশক্তির ব্যবহার হ্রাস করতে পারে, যেখানে সিল দিয়ে ব্যালট বাক্স পূরণ করা যায় না। কাজেই ইভিএমের ভালো দিক আছে। আমরা ইভিএম নিয়ে স্টাডি করছি, যেটা জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেছেন। নির্বাচনে কে এলো আর কে এলো না, এটা আমাদের দায়িত্ব নয়। সংলাপে এমন কথাও কেউ কেউ বলেছেন।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচনে স্বচ্ছতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের বিচরণ যদি থাকে, তারাও রিপোর্ট করতে পারবেন। একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য এসব বিষয়ের প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি। আমাদের সাধারণভাবে ওপেন হতে হবে। তথ্য দিতে হবে বলে মনে করি।’
সিইসি বলেন, ‘আমাদের সৎভাবে দায়িত্ব পালনের স্পৃহা ও চেষ্টা আছে, থাকবে। ব্যাপক অনিয়মের তথ্য আমাদের কাছে এলে, সাহস নয়, আমাদের দায়িত্ব হবে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়ার। অনেক বিধান আমাদের অনুকূলে থাকলেও তা প্রয়োগের হার বাড়াতে হবে। নির্বাচনকে হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতে যা যা করতে হয়, তা তা করতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, তা নিশ্চিত করা। অনেক সময় কারচুপি হয়, সেটা রোধ করতে হবে। আমরা আমাদের সামর্থ্য, দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা করব। আপনারাও আমাদের সহায়তা করবেন।’
বেলা ১১টা ৮ মিনিটে শুরু হওয়া সংলাপে অংশগ্রহণের শুরুতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আস্থার সংকট যদি থেকে থাকে, তাহলে তা কাটিয়ে উঠে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যেমন আপনারা আশা করেন, আমরাও আশা করি।’
এ সংলাপে উপস্থিত থাকতে মোট ৩৮ জনকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ইসির যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান।
সংলাপে অংশ নেন এনটিভির হেড অব নিউজ জহিরুল আলম, এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ ই মামুন, চ্যানেল আইয়ের প্রধান বার্তা সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খান, আরটিভির সিইও সৈয়দ আশিক রহমান, একুশে টিভির হেড অব নিউজ রাশেদ চৌধুরী, বাংলাভিশনের হেড অব নিউজ আব্দুল হাই সিদ্দিক, মাইটিভির হেড অব নিউজ শেখ নাজমুল হক সৈকত, সময় টিভির হেড অব নিউজ মুজতবা দানিশ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির চিফ নিউজ এডিটর আশিস সৈকত, মাছরাঙ্গা টিভির হেড অব নিউজ রেজোয়ানুল হক রাজা, একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন, দেশ টিভির চিফ নিউজ এডিটর বোরহানুল হক সম্রাট, নিউজ২৪-এর এক্সিকিউটিভ এডিটর রাহুল রাহা, ডিবিসি নিউজের সিইও মঞ্জুরুল ইসলাম, বাংলা ট্রিবিউন-এর বার্তা প্রধান মাসুদ কামাল, গ্লোবাল টিভির এডিটর সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ, নাগরিক টিভির হেড অব নিউজ দীপ আজাদ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, যমুনা টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ, স্পাইস টিভির এডিটোরিয়াল হেড তুষার আব্দুল্লাহ, জাগোনিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কে এম জিয়াউল হক প্রমুখ।
এর আগে প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে গত ৬ এপ্রিল সংলাপে বসেছিল ইসি। সংলাপে তাঁরা ইসিকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে দলগুলোর আস্থা অর্জনের পরামর্শ দেন। এ ছাড়া নির্বাচনে জেলা প্রশাসকদের পরিবর্তে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ এবং বিভাগভিত্তিক একাধিক দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুপারিশও করেন তাঁরা।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নিয়ে কমিশন সভার আগেই সংলাপের আয়োজন করে। এর আগে শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে দুই দফায় সংলাপ করে ইসি।
আগের সংলাপগুলোতে আমন্ত্রিতরা ইসির সঙ্গে বৈঠকে বসে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) সীমিত ব্যবহার, নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিজেদের অধীনে আনা, দলগুলোর আস্থা অর্জনসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দেন।
জানা গেছে, এরপর নির্বাচন কমিশন নারী নেত্রীদের সঙ্গে বসতে পারে। সবশেষে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসার কথা রয়েছে কমিশনের।