যে কারণে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ
নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সোমবার রাত থেকে ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি, দফায় দফায় সংঘর্ষ, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া ও পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এর পেছনের কারণ কী? ঘটনাস্থলে থাকা দোকানি-শিক্ষার্থী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে তিন ধরনের তথ্য।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে নিউ মার্কেট এলাকা তখন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। চারিদিকে সংঘর্ষ চলছে। এ সময়ে নিউ মার্কেটের ৪ নম্বর গেট এলাকায় গিয়ে এসব নিয়ে কথা বলতেই প্রথমে জানা গেল, ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল নামের দুটি ফাস্টফুডের দোকানের নিজেদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার কথা। এ বাকবিতণ্ডার কারণেই মূলত সংঘর্ষের সূত্রপাত বলে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
৪ নম্বর গেট এলাকায় অন্তত তিনটি ফাস্টফুডের দোকানে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। তবে, তারা কেউ কথা বলার জন্য রাজি হচ্ছিলেন না। নাম প্রকাশ করতে চাননি। পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন দোকানি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ইফতারের সময় রাস্তায় টেবিল পাতাকে কেন্দ্র করে ওয়েলকাম ফাস্টফুডের কর্মচারী বাপ্পী ও ক্যাপিটালের কর্মচারী কাওসারের মধ্যে বাকবিতণ্ডার শুরু।’
আরেকজন ফাস্টফুডের বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘বাকবিতণ্ডা শুরুর পর সেখানে কয়েকজন আসেন রামদা নিয়ে। তারা গিয়ে ক্যাপিটালের কাওসারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। সে সময় কাওসারের লোকজন বাপ্পীর লোকজনের ওপরও চড়াও হয়। তখন সংঘর্ষ বাধে দুপক্ষের মধ্যে। এরপর বাপ্পীর লোকজন ঢাকা কলেজের কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে কাওসারের লোকজনের ওপর হামলা চালায়।’
কয়েকজন দোকানি জানিয়েছেন, তারা প্রথমে শুনেছেন, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা খাবারের দাম দিতে চাননি; তা থেকে এ ঘটনার সূত্রপাত। এ ঘটনা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে পুরো মার্কেটের দোকানি-কর্মচারীরা ক্ষেপে যান। এরপর নিউ মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেটসহ সেখানকার কয়েকটি মার্কেটের দোকানিরা রাস্তায় নেমে সংঘর্ষে জড়ান।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে এনটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে ওয়েলকাম ও ক্যাপিটালের ফাস্টফুড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া সংঘর্ষের আরও দুটি কারণ জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে নিউ মার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আবুল হাসানের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনিও এ ঘটনায় আহত হয়েছেন। আবুল হাসান বলেন, ‘আমি শুনেছি, একটি পাঞ্জাবি কেনাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত। দোকানদার পাঞ্জাবির দাম এক হাজার ২০০ টাকা চাইলে শিক্ষার্থীরা ২০০ টাকা দিতে চান। এ নিয়ে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। প্রাথমিকভাবে আমি এটি জানতে পেরেছি। বিস্তারিত তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা জানতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা নিউ মার্কেটের একটি দোকানে কেনাকাটা করতে যান। দাম নিয়ে দোকানির সঙ্গে তাঁদের বাকবিতণ্ডা হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দোকানদার ও তাঁর লোকজন তাঁদের মারধর করেন। পরে শিক্ষার্থীরা হলে গিয়ে বিষয়টি জানায়। হলের শিক্ষার্থীরা একযোগে নিউ মার্কেটের গেট ভেঙে ওই দোকানদারকে মারতে যান। খবর পেয়ে আমরা তাঁদের বাধা দেই এবং চলে যেতে বলি।’
সংঘর্ষে লিপ্ত থাকা একাধিক দোকানি এ প্রতিবেদককে বলেন, কয়েকজন শিক্ষার্থী ফাস্টফুডের দোকানে খেতে যান। গিয়ে তারা প্রকৃত দাম দিতে চাননি। তারপর এ সংঘর্ষের সূত্রপাত। এ বক্তব্যের প্রমাণ পাওয়া যায়, দোকানিদের দেওয়া স্লোগানে। তারা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘ছাত্ররা ফকির’, ‘খেয়ে টাকা দিতে চান না’, ‘ওরা ডাকাত, ডাকাতি করে খেতে চায়’। তবে, এ ঘটনা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের বক্তব্য জানা যায়নি।