শনিবার থেকে স্টেশনে, টিকেট পাওয়ার আশা সোমবার!
সোলাইমান হোসেন পরিবার নিয়ে চাঁদপুর থাকেন। একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন তিনি। গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম। তিনি, তাঁর স্ত্রী, দুই ছলে-মেয়েসহ ঈদে গ্রামে যেতে চান ট্রেনে। কিন্তু, চাঁদপুর থেকে কুড়িগ্রামে সরাসরি ট্রেন যায় না। তাই, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সোলাইমান হোসেন ঢাকায় এসেছেন ট্রেনের টিকেট কাটার উদ্দেশে।
সোলাইমান হোসেন প্রস্তুতি নিয়েই এসেছেন। সঙ্গে চাদর ও গামছা নিয়ে এসেছেন। সারা রাত স্টেশনেই শুয়ে ছিলেন চাদর বিছিয়ে। তবে, মশা তাঁকে ছাড়েনি।
এত কিছুর পরেও আজ সোলাইমান হোসেন টিকেট কাটতে পারেননি। সিরিয়াল পাওয়ার আগেই ২৮ এপ্রিলের টিকেট শেষ। সেজন্য, ২৮ এপ্রিলের চিন্তা ছেড়ে দিয়ে ২৯ এপ্রিলের টিকেটের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। ভাবছেন, আজ রাতেও তিনি স্টেশনে টিকেটের সিরিয়ালেই শুয়ে-বসে থাকবেন। আগামীকাল সোমবার টিকেট নিয়ে চাঁদপুর রওনা দিবেন।
সোলাইমান হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, “চাঁদপুর থেকে কুড়িগ্রাম যেতে হলে ঢাকায় আসতেই হবে। সেজন্য, এখানে আসা। গতকাল শনিবার এসেছি। আল্লাহ চাইলে করলে ‘সোনার টিকেট’ নিয়ে আগামীকাল রোবার চাঁদপুর ফিরব। চাঁদপুর থেকে পরিবার নিয়ে আবার চলে আসব। তারপর ট্রেনে চড়ে কুড়িগ্রাম ফিরব। ভাগ্যিস, প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলাম। তবুও ক্লান্ত লাগছে। স্টেশনে শুয়ে-বসে কি আর ভালো লাগে?”
আরেক টিকেটপ্রত্যাশী জুয়েল ইসলাম শনিবার দুপুরে কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য—দিনাজপুরের বীরগঞ্জের টিকেট পাওয়া। গতকাল শনিবার দ্রুতযান এক্সপ্রেসের টিকেটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, টিকেট পাননি। তবুও অপেক্ষায় ছিলেন সারা রাত। আজ রোববার ভোরের দিকে জুয়েল অসুস্থ বোধ করেন।
বড় ভাইয়ের কষ্টের কথা ভেবে জুয়েলের ছোট ভাই রুবেল ইসলাম সেহরি খেয়েই চলে আসেন কমলাপুর স্টেশনে। তারপর জুয়েল বাসায় ফেরেন। ভোর থেকে রুবেল দাঁড়িয়ে থেকেও টিকেট কাটতে পারেননি। অথচ, তাঁদের সিরিয়াল নম্বর ছিল ৮৩। আজ সারা দিনে মোট ৭০ জন টিকেট পেয়েছেন বলে জানান রুবেল। বলেন, ‘আমার সামনের ১৩ জন আজ টিকেট পাননি।’
কমলাপুর রেল স্টেশনে দুপুর দেড়টার দিকে রুবেল ইসলামের সঙ্গে দেখা এ প্রতিবেদকের। গল্পে রুবেল বলছিলেন, ‘আগামীকাল সোমবার সকালে টিকেট ছাড়বে, সেজন্য লাইনে বসে গেছি। লাইন ছেড়ে গেলে টিকেটই পাব না। আমি ২০১৩ সাল থেকে ঢাকায় থাকি। মোহাম্মদপুরে আমার ফার্নিচারের ব্যবসা রয়েছে।’
রুবেল ইসলাম আরও বলেন, ‘বেশির ভাগ ঈদই আমি ঢাকায় করেছি। কিন্তু, এবার স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজন গ্রামে যাবেই। ফলে, টিকেট লাগবেই। সারা রাত স্টেশনে থাকব, কাল টিকেট নিয়ে তারপর চলে যাব। ২৮ এপ্রিলের টিকেট না হলেও ২৯ এপ্রিলের টিকেট লাগবেই। টিকেটের দাম ৪৬৫ টাকা।’
আসাদুজ্জামান আকাশও টিকেট পেতে কমলাপুর এসেছেন। বিকাশে চাকরি করেন তিনি। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে তিনি এসেছেন কমলাপুর রেল স্টেশনে। যাবেন শ্বশুরবাড়ি লালমনিরহাটে। তাঁর নিজের বাড়ি রাজশাহী। স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ায় গত ২১ এপ্রিল তাঁকে তাঁর বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। ঈদের দিন বিকেলে আকাশ রাজশাহী যাবেন।
আসাদুজ্জামান আকাশ বলছিলেন, ‘লালমনিরহাট এক্সপ্রেসের টিকেট কাটব বলে এসে লাইনে দাঁড়ালাম। কিন্তু, ২৮ তারিখের টিকেট শেষ। সুতরাং ২৮ তারিখ যাওয়া হবে না। এখন চিন্তা ২৯ এপ্রিলের। আজ সারা রাত এখানে থাকব। কাল টিকেট দেওয়া শুরু করলে, টিকেট নিয়ে তারপর বাসায় যাব।’
লাবনী আক্তার যাবেন কুড়িগ্রাম। সেখানে তাঁর শ্বশুর বাড়ি। জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জ। ঈদ করবেন কুড়িগ্রামে। সেজন্য নারায়ণগঞ্জ থেকে টিকেট কাটতে এসেছেন। কিন্তু, আজ টিকেট পাননি। সেজন্য তিনি সারা রাত স্টেশনেই অপেক্ষা করবেন। রোববার সকালে টিকেট নিয়ে তারপর নারায়ণগঞ্জ ফিরবেন।
কেবল সোলাইমান হোসেন, আসাদুজ্জামান আকাশ কিংবা লাবনী আক্তার নন, এমন শতশত মানুষ রোববার দিবাগত রাত কমলাপুর স্টেশনেই কাটিয়ে দেবেন। কারণ, টিকেট পেতে হলে সেখানই থাকতে হবে, নতুবা টিকেট পাবেন না। দুপুর দেড়টার দিকে প্রত্যেকটি টিকেট কাউন্টার থেকে বলে দেওয়া হয়েছে, ২৮ এপ্রিলের টিকেট শেষ। এরপর থেকে সবাই লাইনে বসে পড়েছেন। এখন অপেক্ষা আগামীকাল রোববারের।