ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে নতুন টাকার বাজার
শুধু শপিংমল, বাসস্ট্যান্ড কিংবা রেলস্টেশন নয়, ঈদকে কেন্দ্র করে জমজমাট হয়ে উঠেছে নতুন টাকার বাজারও। ঈদ উপলক্ষে এ বাজারের ব্যবসা এখন তুঙ্গে। নতুন টাকা পেয়ে ক্রেতা যেমন খুশি, বাড়তি টাকা আয় করতে পেরে বিক্রেতাও খুশি। ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে নতুন টাকার বাজার।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তানের নতুন টাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে ৩৭ জন বিক্রেতা নতুন টাকা বিক্রি করছেন। প্রত্যেকে বিক্রেতার সামনে অন্তত একজন করে নতুন টাকার ক্রেতা দেখা গেছে।
ঈদের দিন ঈদ সালামি দিতে বেশি দামে এসব নতুন টাকা কিনতে এসেছেন ক্রেতারা। তবে, একজন ক্রেতার সঙ্গে বেশিক্ষণ কথা বলারও সুযোগ পাচ্ছেন না বিক্রেতারা। অন্য সময়ের চেয়ে ঈদের কারণে এখন ক্রেতার সংখ্যা বহুগুন। ফলে, দরকষাকষির সুযোগও কম। বিক্রেতা এক দাম বলে বসে থাকছেন।
১০ টাকার নোটের ১০০টির একটি বান্ডিল অর্থাৎ এক হাজার টাকা নিতে ১৬০ টাকা বেশি দিতে হবে জানিয়ে তাঁরা বসে থাকছেন। সব নোটের ক্ষেত্রেই এক দাম বলে বসে থাকছেন বিক্রেতা। ক্রেতারাও উপায় না পেয়ে বেশি মূল্য দিয়ে নতুন টাকা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
গুলিস্তানের ফুটপাতের টাকার মার্কেটে ২০ বছর ধরে বসেন মোহাম্মদ আসলাম। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টার পর থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত নতুন তিন লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। আসলাম বলছিলেন, ‘ঈদের কারণে এখন ব্যবসা ভালো। ঈদের দিন পর্যন্ত এ অবস্থা থাকবে।’ এ কথা বলতে বলতে নাদিম হোসেন নামের একজন বিক্রেতা তাঁর কাছ থেকে ৩৮ হাজার টাকার নতুন নোট কিনলেন। নিলেন ৩৮ হাজার ৬০০ টাকার বিনিময়ে।
মোহাম্মদ আসলাম জানাচ্ছিলেন, দুই টাকার ১০০টি নোটে ১০০ টাকা ও ১০ টাকার ১০০টি নোট ১৬০ টাকা বেশি নিচ্ছেন৷ এ ছাড়া ২০ টাকায় ১০০টি নোটে ১৫০ টাকা, ৫০ টাকার ১০০টি নোটে ১৮০ টাকা, ১০০ টাকার ১০০টি নোটে ১৫০ টাকা ও ২০০ টাকার ১০০টি নোটে ২০০ টাকা বেশি রাখছেন। অন্তত পাঁচজন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, সেখানেও একই রকম দাম।
তাই বলে এত বেশি লাভ করবেন, এমন প্রশ্নে মোহাম্মদ আসলাম বলছিলেন, ‘১০ টাকার নোট আমিই ১৩৫ টাকার বেশি দিয়ে কিনেছি। এতে আমার লাভ তো বেশি না। লাভ করে মূলত ব্যাংকের কর্মচারীরা। এ টাকাগুলো আমার হাত পর্যন্ত আসতে কমপক্ষে তিন-চারটি হাত বদল হয়েছে। আমি যার কাছ থেকে কিনি, তিনি মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে থেকে কেনেন। তার কাছে ব্যাংকের কেউ না কেউ দিয়ে যান। আবার মূল জায়গা থেকে টাকা বের হওয়ার সময়ও তারা বেশি দাম রাখেন। সব মিলিয়ে কয়েক হাত বদল হতে হতে দাম বেড়ে যায়।’
দাম অনেক বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে মোহাম্মদ আসলামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অন্তত আরও চার ব্যবসায়ী একই কথা বলেছেন। তবে, তাঁদের মধ্যে আশরাফ মোল্লা নামের একজন বলেন, ‘আগের চেয়ে গত কয়েকদিন হলো একটু দাম বেশি বাড়ছে। কারণ, এখন ঈদের জন্য অধিকাংশই নতুন টাকার খোঁজ করবেন। গ্রামে যাওয়ার আগে নতুন টাকা নিয়ে যাবেন। আর ব্যবসায়ীরা তো এটা জানেনই। ফলে, দাম বেড়ে গেছে।’
ক্রেতা নাদিম হোসেন একজন ব্যবসায়ী। তিনি ঈদ উদযাপনে খুলনা যাবেন। তাঁর নিজের এবং দুই ভাইয়ের জন্য এসব নতুন টাকা নিয়ে যাবেন। যাকে ইচ্ছে তাকে ঈদ সালামি দিবেন তাই। কথা বলতে বলতে নাদিম এক সময় বলে উঠলেন, ‘নতুন টাকার গন্ধ, লাগে না মন্দ! বাড়িতে যাব, সবাইকে নতুন টাকা দেব। বাচ্চা-কাচ্চাদের দেব, ভালো লাগবে। তারা আনন্দ পাবে। নাকে নিয়ে গন্ধ শুকবে। হাতে নিয়ে বারবার নেড়েচেড়ে দেখবে। এটা দেখতে আমারও ভালো লাগবে।’
শরিফুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা ৫০ টাকার নোট নিতে চাইলেন ২০০টি। দোকানি মো. রহিমুল তাঁর কাছে ৩৮০ টাকা অতিরিক্ত চাইলেন। পরে ৩৫০ টাকায় তা দিয়ে দিলেন। এ সময় শরিফুল বলেন, ‘ঈদের সময় নতুন টাকা লাগে, নিতেই হবে।’
শরিফুলের সঙ্গে কথা বলতে বলতে আবিদ হোসেন নামের একজন এক ব্যাগ নতুন টাকা নিয়ে হাজির দোকানে। ব্যাগ থেকে নতুন টাকা দিলেন একে একে কয়েকজন দোকানিকে। আর ওই টাকার হিসাব করে ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট গুনে নিলেন। তিনি মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে এসব দোকানির কাছে বিক্রি করেন।
জানতে চাইলে আবিদ হোসেন বলেন, ‘আমি ব্যাংকের লোকদের কাছ থেকে কিনি। এখানে এনে এদের কাছে বিক্রি করি। আমি সামান্য লাভে দিয়ে দিই। আমি যার কাছ থেক কিনি, তিনিও লাভ করেন। কয়েক স্তর ঘুরে সাধারণ মানুষের কাছে এ টাকা পৌঁছায়।’