দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে  দিনাজপুর গোর-এ শহীদ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ। এরই মধ্যে সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিনারে সংস্কার কাজ, রঙ করা, ধোয়া-মোছা, মাটি ভরাটসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করা হয়েছে।

ঈদ জামাত উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এ ছাড়া ঈদের নামাজে আসা মুসল্লিদের নিরাপত্তায় তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মাঠের বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যবেক্ষণের টাওয়ার। এ ছাড়া পাশের স্টেশন ক্লাব, সার্কিট হাউস, শিশু একাডেমি ও জেলা গণগ্রন্থাগারেও যানবাহন রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রবেশের জন্য মাঠের চারপাশে তৈরি করা হয়েছে তোরণ। শহরের প্রবেশমুখ এবং মিনারে যাওয়ার রাস্তাতেও তৈরি করা হয়েছে তোরণ। মুসল্লিদের জন্য মাঠে ওজুখানা ও ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসব স্থানে বিদ্যুতের পাশাপাশি থাকবে জেনারেটর।

জানা গেছে, দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানের পশ্চিম প্রান্তে ২০১৫ সালে এই ঈদগাহের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রায় দেড় বছর পর এটি নামাজের জন্য প্রস্তুত করা হয়। এ ঈদগাহে ৫২টি গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার রয়েছে। মাঝখানের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে এবং প্রধান মিনারের উচ্চতা ৫৫ ফুট। এসব মিনার আর গম্বুজের প্রস্থ ৫১৬ ফুট। দেশের সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানের পশ্চিম দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এ ঈদগাহ মিনারটি। প্রত্যেক গম্বুজে দেওয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক বাতির সংযোগ। মিনার দুটির উচ্চতা ৫০ ফুট। যে মেহরাবে খতিব বয়ান করবেন, সেটির উচ্চতা ৫০ ফুট। ৫২টি গম্বুজ ২০ ফুট উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে।

প্রতি বছর দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। দিনাজপুরবাসী আশা করছে, এবার থেকে ৫২ গম্বুজের গোর-এ শহীদ ঈদগাহ মাঠে সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। দিনাজপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এ বড় ঈদ জামাতের উদ্যোগ নেন। তাঁর তত্ত্বাবধানেই তৈরি হয়েছে এ মিনার।

দেশের মধ্যে বড় এই ঈদের জামাতে ইমামতি করবেন দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শামসুল হক কাসেমী। ঈদুল ফিতরের জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। 

দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে ঈদের জামাতকে ঘিরে কড়া নিরাপত্তার জন্য নেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। ঈদগাহের চারপাশে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের তল্লাশির ব্যবস্থা থাকবে। ঈদগাহ প্রাঙ্গণে সাদা পোশাকে পুলিশ, র‌্যাব, আনসারসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যেরা সক্রিয় থাকবেন। এ ছাড়া মাঠের নিরাপত্তার জন্য নির্মিত হয়েছে চারটি বড় পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকবে শহরজুড়ে, যাতে করে দূর-দূরান্ত থেকে আসা যানবাহনগুলোর শহরে প্রবেশ করতে ও বের হতে কোনো সমস্যা না হয়।

আয়োজকেরা জানান, দিনাজপুর জেলা ছাড়াও  দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মুসল্লিরা এ ঈদগাহে নামাজ আদায় করতে আসবেন। এবার আয়োজকেরা দাবি করেছেন, পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ নামাজ আদায় করবেন।

মুসল্লিদের সংখ্যার দিক থেকে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়াকেও এ ঈদগাহ জামাত ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। করোনার কারণে গত দুবছর এ ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায় করতে পারেননি মুসল্লিরা। সবাই অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে নামাজ আদায়ের জন্য।