রাশিয়ার হাতে ইউক্রেনের মারিউপোল বন্দরের পতন ‘আসন্ন’
দখলদার রুশ বাহিনীর হাতে ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিউপোলের পতন আসন্ন বলে ধারণা করছে সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা।
ইউক্রেন প্রশাসন মারিউপোলের বিস্তীর্ণ ইস্পাত কারখানা পরিত্যাগ করায় এবং সেখানে আটকে থাকা শত শত ইউক্রেনীয় যোদ্ধা সমঝোতার মাধ্যমে রুশ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের কারণে ধারণা করা হচ্ছে—খুব শিগগরিরই শহরটি রুশ বাহিনীর কবজায় চলে যাচ্ছে।
আজভ সাগরের উত্তর উপকূল বরাবর চার লাখ ৩০ হাজার জনসংখ্যার যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর মারিউপোল রুশ বাহিনী দখল করলে, তা হবে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে প্রায় তিন মাসের হামলায় মস্কোর সবচেয়ে বড় সাফল্য।
রাশিয়া অবশ্য ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে আরও বেশি এলাকা দখল করতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, তারা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সরকারের পতন ঘটাতে কিংবা দেশটির রাজধানী কিয়েভ দখল করতে ব্যর্থ হয়েছে।
রাশিয়ার ক্রমাগত গোলাবর্ষণের ফলে ইউক্রেনের ধারণা অনুযায়ী, মারিউপোলে প্রায় ২০ হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে এবং শহরের বেশির ভাগ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বাকি যা রয়েছে, তা রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড ও ক্রিমিয়া উপদ্বীপের মধ্যে অবস্থিত। রাশিয়া ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল করেছিল।
রাশিয়া বলছে—মারিউপোলে তাদের অভিযানের জেরে ইউক্রেনীয় বাহিনী গণআত্মসমর্পণ করেছে। অন্যদিকে, ইউক্রেনের দাবি—তাদের সৈন্যরা মিশন সম্পন্ন করেছে।
এদিকে, ইউক্রেনের যোদ্ধাদের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। একজন রুশ কর্মকর্তা পূর্ণাঙ্গ বন্দি বিনিময় নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী আনা মালিয়ার বলেছেন, মারিউপোলের পূর্বাঞ্চলীয় নভোজভস্কের একটি হাসপাতালে ৫৩ জন গুরুতর আহত যোদ্ধাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নোভোয়াজভস্ক এখনও রুশ সেনা এবং রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এ ছাড়া আরও ২১১ জন ইউক্রেনীয় যোদ্ধাকে ওলেনিভকা শহরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই এলাকাটি রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নিয়ন্ত্রণ করে। মালিয়ার বলেন, সরিয়ে নেওয়া যোদ্ধারা রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য বন্দি বিনিময়ের আওতায় পড়বে।
এদিকে, জাতির উদ্দেশে নিয়মিত রাতের ভিডিও ভাষণে প্রেসিডেন্ট জেলেন্সি মারিউপোল থেকে সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কথা বলেন।
জেলেনস্কি বলেন, ‘মারিউপোল রক্ষায় দায়িত্বে থাকা যোদ্ধাদের উদ্ধারে আমাদের সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অভিযান শুরু করেছেন। সৈন্যদের বাড়ি আনার জন্য কাজ চলতে থাকবে এবং এ কাজে সূক্ষ্মতা ও সময় প্রয়োজন।’
অন্যদিকে, ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, মারিউপোলে প্রতিরোধের শেষ শক্ত ঘাঁটি ইস্পাত কারখানার ভেতরে থাকা অবশিষ্ট যোদ্ধাদের উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া গত সোমবার ইউক্রেন দাবি করেছে, তাদের বাহিনী পালটা আক্রমণে খারকিভ অঞ্চলে রুশ সৈন্যদের পিছু হটিয়ে দিয়েছে। এর ফলে ইউক্রেনীয় সেনার রাশিয়ার সীমান্তে পৌঁছাতে পেরেছে।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। তারা বলছে—সীমান্তে তাঁদের সেনার উপস্থিতি ওই ভিডিওতে দেখা যায়। ভিডিওতে সেখানকার একজন সৈনিক প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে বলছেন, ‘আমরা এখানে আছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের একজন ঊর্ধ্বতন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাও বলেছেন, ইউক্রেনের সেনারা রাশিয়ার সীমান্ত তিন থেকে চার কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে গেছে।
এদিকে, ইউক্রেনের মিত্র পশ্চিমাদেশগুলো ইউক্রেন বাহিনীর জন্য আরও অস্ত্র পাঠানো অব্যাহত রেখেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সাত দেশ থেকে উড়োজাহাজে করে ১০টি চালান কিয়েভে পৌঁছেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।