কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে অভিযোগ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে পকেট কমিটি গঠন করার লক্ষ্যে গোপনে অবৈধ কাউন্সিলর করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম চত্বরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা এমন অভিযোগ করেন।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গিয়াস উদ্দিন মো. মফিজের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিদ্দিক হোসাইন স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রশিদাবাদ ইউনিয়ন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ জুবায়ের।
পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ খান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আগামী ২৫ মে সম্মেলনকে সামনে রেখে উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো বর্ধিত সভা করা হয়নি। বর্তমান উপজেলা কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ১১ ইউনিয়নে অবৈধ কাউন্সিলর তালিকা প্রণয়ণ করেছেন। এমনকি কাউন্সিলর তালিকা এখন পর্যন্ত ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছেও দেওয়া হয়নি। কয়েকটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকেরাও জানেন না তাঁদের ইউনিয়নের কীভাবে তালিকা করা হয়েছে এবং তালিকায় তাদের নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ২৫ বছর আগে ১৯৯৭ সালে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে শুধু সভাপতি হিসেবে অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অধ্যাপক শরীফ সাদীর নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হলেও তৎকালীন জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। ফলে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে অনুমোদনহীন কমিটি পরিচালিত হয়ে আসছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সব বিবেচনায় ১৯৯৭ সালে গঠিত সদর উপজেলা কমিটি এবং ২০১৪ সালের করা ইউনিয়ন কমিটিগুলো গঠনতন্ত্র পরিপন্থি এবং মেয়াদোত্তীর্ণ। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো যে কাউন্সিলর তালিকা করছে সেই তালিকা বৈধ হতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে ২৫ মে সম্মেলনে কাউন্সিল অধিবেশন করা গঠনতান্ত্রিক বিধানে সম্ভব নয় দাবি করে তা বাতিলের দাবি জানারো হয়।
এ অবস্থায় কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ২৫ বছরের পুরোনো সদর উপজেলা কমিটি বাতিল করে গ্রহণযোগ নেতাকর্মীদের নিয়ে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন করে কাউন্সিল করার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সদর উপজেলা কমিটির সদস্য ইব্রাহীম খলিল, দানাপাটুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম মাসুদ, লতিবাবাদ ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম তাজুল ইসলাম এবং মারিয়া ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আতাউর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা সংবাদ সম্মেলন করেছে, তাদের প্রায় সবাই সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কেউ নয়। অনেকেই আগে থাকলেও বিভিন্ন সাংগঠনিক কারণে পরে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দলের গঠতনতন্ত্র মেনেই চলতি মাসের ১৪ মে জেলা কার্যালয়ে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্ধিত সভায় কমিটির দুই-তৃতীয়াংশের বেশি নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত মেনেই কাউন্সিলর করা হচ্ছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল বলেন, বিগত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন এবং তাঁদের পক্ষে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁরা কাউন্সিলর হতে পারবেন না। বৈধদেরই কাউন্সিলর করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর দাবি, সম্মেলনকে বিতর্কিত করতেই এমন অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।