‘বিদ্রোহী কবিতাটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল মানচিত্র’
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছেন, ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতাটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল মানচিত্র। যেখানে বেদ-পুরাণ-উপনিষদ-গীতা মহাকাব্য থেকে ইসলামের অনুষঙ্গ অসামান্য দক্ষতায় চিত্রিত হয়েছে।’
নজরুল স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লার বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে (টাউন হল) প্রতিমন্ত্রী আজ দুপুরে জাতীয় কবির ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
‘বিদ্রোহী, এক অনন্য সাধারণ রচনা’ উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘কবি এক রাতেই বাংলা তথা বিশ্বসাহিত্যের অনবদ্য এ কবিতাটি রচনা করেছেন। মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯২১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নজরুল রচনা করেন ১৪১ পঙক্তির এই ভুবনবিজয়ী কবিতা, যার প্রথম শ্রোতা ছিলেন মুজাফফর আহমদ।’
মুজাফফর আহমদের সূত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তাঁর সূত্রে জানা যায়, সেসময় বলপেন বা ফাউন্টেন পেন ছিল না। দোয়াতে বারে বারে কলম ডোবাতে গিয়ে মাথার সঙ্গে হাত তাল রাখতে পারবে না ভেবে নজরুল কবিতাটি প্রথমে পেনসিলে লিখেছিলেন।’
সভাপতির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কুমিল্লার মাটি ও মানুষের সঙ্গে নজরুলের রয়েছে অটুট বন্ধন। ১৯২১ সালের এপ্রিল থেকে ১৯২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নজরুল কুমিল্লায় এসেছেন মোট পাঁচবার। সব মিলিয়ে থেকেছেন প্রায় ১১ মাস। নজরুলের দাম্পত্য জীবনের বন্ধনও ঘটেছিল কুমিল্লায়।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কুমিল্লার দৌলতপুরে ৭৩দিন অবস্থানকালে নজরুল ১৬০টি গান ও ১২০টি কবিতা রচনা করেছেন। এখানকার রচনা নজরুলকে প্রেমিক কবি হিসেবে পাঠক দরবারে পরিচিত করেছে।’
নিজেকে কুমিল্লার অর্ধেক নাগরিক দাবি করে কে এম খালিদ বলেন, ‘পিতার চাকরিসূত্রে আমার শৈশব কেটেছে কুমিল্লা শহরে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি শহরের ফরিদা বিদ্যায়তনে।’
কে এম খালিদ বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রকৃতি, মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নজরুলকে আকর্ষণ করেছিল। সে সময় তিনি সুদূর কলকাতা থেকে ছুটে এসেছেন ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, চুয়াডাঙ্গা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ পূর্ব বাংলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে।’
কে এম খালিদ বলেন, ‘সেসময় যাতায়াত ব্যবস্থা তেমন ভালো ছিল না। কোন যাতায়াত মাধ্যম ও রুট ব্যবহার করে নজরুল এদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসেছিলেন, তা নিয়ে আগ্রহী গবেষকগণ গবেষণা করতে পারেন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রয়োজনে এসব গবেষণাকর্মে পৃষ্ঠপোষকতা করবে।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। স্মারক বক্তৃতা করেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও নজরুল গবেষক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন (রিমি), কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহার, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান এবং কবির নাতনি খিলখিল কাজী ও মিষ্টি কাজী।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান। পরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে নৃত্যনাট্যসহ ৩০ মিনিটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।