ভোলায় জনসেবার পাশাপাশি সফল খামারি জনপ্রতিনিধি বিপ্লব
জনসেবার পাশাপাশি দক্ষ খামারি হতে পারে তারই দৃষ্টান্ত গড়েছেন ভোলার বাপ্তা ইউনিয়নের চারবার নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইয়ানুর রহমান বিপ্লব মোল্লা। কী নেই তাঁর খামারে। পেঁয়াজ, আলু, মাছ, আম, লিচু, জামরুল, কাঠাল থেকে শুরু করে সবই আছে। বিষমুক্ত ফল পাওয়ার বেশ সুনাম রয়েছে এই খামারের। এতে বেশ লাভবান হচ্ছেন তিনি। সফলতা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাকও।
বিপ্লবের খামারের নাম—সবুজ বাংলা কৃষি খামার। ভোলা সদর থেকে অন্তত ১৭ কিলোমিটার দূরে রাজাপুর ইউনিয়নের চর মনসা গ্রামে প্রায় ৩৫ একর জমির ওপর ২০০৫ সালে গড়ে উঠেছে সবুজ বাংলা কৃষি খামার। শখের বসে খামারটি গড়ে তুললেও ২০১০ সালে যাত্রা শুরু করে বাণিজ্যিকভাবে।
মনোরম পরিবেশ আর বিশাল এই খামারে দেড় হাজারের মতো রয়েছে আমের গাছ। যার মধ্যে কাটিমন, বারি-৪, হাড়িভাঙ্গা, ব্যানানা, গৌড়মতি, কিউজাই, পালমার, চাকাপাত, থাইকাচা মিঠা, চিয়াংমাই, ব্রুনাইকিংসহ বিভিন্ন দেশের নানান প্রজাতির গাছ।
বাগানে আছে শত শত লিচু গাছ। যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য মোজাফফরি, দেশিসহ বিভিন্ন প্রজাতির লিচু।
এ ছাড়া জামরুল, মাল্টা, লেবু, নারিকেল বাগান, কাঠাল, মাছ ও ডেইরি ফার্ম রয়েছে এই খামারে।
জেলায় একমাত্র বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তোলা খামারটিতে দূরদুরান্ত থেকে ক্রেতারা এসে বাগান থেকেই ফল কিনে নিচ্ছেন। বাগান দেখা, আর একই সঙ্গে ফরমালিনমুক্ত লিচু কেনার অন্যরকম আনন্দের কথা জানালেন ক্রেতা মো. আরিফুর রহমান, মো. এরফান এবং মো. রুবেল খান। তাদের মতে, দাম বেশি হলেও ঝুঁকিমুক্ত ভালো স্বাদের ফল উপকারী।
খুচরা বিক্রেতা মো. মনির হোসেন জানান, দেশের অন্য জেলায় যখন লিচু আসে না, তখন ভোলার এই খামারের লিচু পেকে যায়। যে কারণে কিনে নিয়ে বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছি। ভোলার মানুষের কাছে এই খামারের কথা বললেই তারা কিনে নিয়ে যায়।
প্রায় ৫১ বছররের ইয়ানুর রহমান বিপ্লব সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের চার বারের ইউপি চেয়ারম্যান এবং একই সঙ্গে সফল একজন খামারি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে রীতিমত ভোলা জেলা ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন।
আলু আর পেঁয়াজ চাষেও রয়েছে সবচেয়ে বড় অবদান। একশ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন করেছেন এ বছর। বেশ ভালোই লাভবান তিনি। তাঁর এই সফলতা দেখার জন্য ছুটে এসেছেন সয়ং কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি পেঁয়াজের ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলে বিপ্লবের এই বিপ্লব ঘটনোর প্রশংসাও করেছেন।
আর সবকিছু নিজের মুখেই তুলে ধরলেন বিপ্লব ঘটানো সবুজ বাংলা কৃষি খামারের কর্ণধার ইয়ানুর রহমান বিপ্লব মোল্লা। সারের কারসাজির কথা তুলে ধরে তা কৃষকদের মাঝে সমানভাবে যাতে বণ্টনের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠমুখী হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্যসব জনপ্রতিনিধি ও বেকার যুবকের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, তাঁরাও যেন এমন খামার গড়ে তুলে নিজেরকে সাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলেন। তাঁরা যেন চাকরির পেছনে না ঘুরে নিজেরাই যেন উদ্যোক্তা হন।’
প্রায় প্রতিদিন আসছেন প্রশাসনের কর্তারাও। ঘুরে বাগান দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। খোঁজ খবর নিচ্ছেন বাগানের সার্বিক পরিস্থিতির। যাওয়ার সময় বাগান থেকে কিনে নিচ্ছেন ফরমালিন মুক্ত লিচু। তেমনি ভোলা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. আলী সুজা গিয়েছিলেন খামারটিতে। তিনি মুগ্ধ হয়ে বললেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের নামে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাই। তবে, একজন জনপ্রতিনিধি খামারি হয়ে সমাজের অনুকরণীয় হয়েছেন তিনি। বেকারত্ব ঘুচিয়ে কীভাবে সাবলম্বী হওয়া যায়, তা এই কৃষি খামারটি দেখলে বোঝা যায়।’
খাসজমি বেকারদের নামে কিংবা কৃষি খামার করার ক্ষেত্রে দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে মো. আলী সুজা বলেন, ‘ফলের বাগানসহ ফলদ বাগান করতে চাইলে আমরা উপযুক্ত প্রমাণ পেলে তাদেরকেই জমি বন্দোবস্ত দেব। এটা আমাদের নীতিমালায়ও রয়েছে।’
সম্প্রতি খামার দেখতে আসেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। সেসময় কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা আমদানি বন্ধ করে দেয়, তখন এখানে পেঁয়াজের কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা হয়। আমরা চাচ্ছি বাংলাদেশকে পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পন্ন করতে। ভোলায় বিপ্লব পেঁয়াজের আবাদ করে খুবই সফল হয়েছে। এটা যদি ভোলাসহ সারা দেশ অনুকরণ করে সারা দেশে একটা বিপ্লব হবে।’