বিদ্যুৎখাত সংস্কারে ক্যাবের ১১ দফা
জ্বালানি অধিকার সুরক্ষায় বিদ্যুৎখাত সংস্কারে ১১ দফা প্রস্তাব দিয়েছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক নাগরিক সভায় প্রস্তাবগুলো তুলে ধরা হয়। অসাধু ব্যবসা প্রতিরোধে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানায় সংগঠনটি।
মূল্যবৃদ্ধি না করে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতের আর্থিক ঘাটতি সমন্বয়ের বিকল্প প্রস্তাব উপস্থাপনে এ নাগরিক সভার আয়োজন করে ক্যাব। এসময় ক্যাব কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি (প্রস্তাবিত) শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
নাগরিক সভায় বিদ্যুৎখাত সংস্কারে ক্যাবের ১১ দফা প্রস্তাবগুলো হলো—
১. বাল্ক বিদ্যুতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যহার বৃদ্ধি না করে অন্যায়, অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয়, যেমন তরল জ্বালানির অবৈধ বৃদ্ধিজনিত মূল্য ও অবৈধ বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ ব্যয় সমন্বয় না করে, পাইকারি বিদ্যুতে আরইবি’র ঘাটতি সরকারি ভতুর্কিতে সমন্বয় করে, চুরি গ্যাস সমন্বয়ে ৬৩ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়ে সিঙ্গেল সাইকেল প্লান্ট ও ফার্নেসওয়েল ও ডিজেল প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে জ্বালানি ব্যয় সাশ্রয় করে, শুল্ক-করাদি অব্যাহতি সুবিধা বলবৎ রেখে, ব্যক্তিখাতের পরিবর্তে বিপিসি’র মাধ্যমে ফার্নেসওয়েল আমদানি করে, এবং বিতরণ লাইসেন্সি ভেদে সঞ্চালন ভোল্টেজ লেভেলে বিদ্যুতের পাইকারি মূল্যহার ভর্তুকিমুক্ত করে সমন্বয়ের প্রস্তাব করেছে ক্যাব; সরকারি কোম্পানিসমূহের অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক পুঞ্জিভূত মুনাফা এবং অবচয়/ক্যাপাসিটি চার্জের অর্থে ও ক্যাবের প্রস্তাব মতে সাশ্রয়ী উদ্বৃত্ত অর্থে সরকারি ভতুর্কি সমন্বয় করে ক্যাব তিন হাজার ৩২৪ কোটি টাকা সরকারি ভর্তুকি নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছে।
২. অবৈধভাবে নির্ধারিত ডিজেল ও ফর্নেসওয়েলের বর্ধিত মূল্য এবং কুইক রেন্টালের বিদ্যুৎ অবৈধভাবে ক্রয়কৃত মূল্য বিইআরসি কর্তৃক পূনর্মূলায়নক্রমে নির্ধারিত যৌক্তিক বর্ধিত মূল্য ও পুনর্নির্ধারিত মূল্য পিডিবি’র পরিবর্তে সরকারি ভর্তুকি দ্বারা পরিশোধের প্রস্তাব করা করেছে।
৩. লসে আরইবিকে বিদ্যুৎ দেওয়ায় যে-ঘাটতি, সে-ঘাটতি সরকারি ভর্তুকি দ্বারা সমন্বয় হবে—এই মর্মে অত্র শুনানিতে ভোক্তা পক্ষের প্রস্তাব অনুযায়ী আদেশের প্রস্তাব করা করেছে।
৪. পিডিবি মুনাফাভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়। পিডিবি’র রাজস্ব চাহিদায় মুনাফা ও করোপারেট ট্যাক্স অন্তর্ভূক্তির ব্যাপারে বিইআরসি’র কারিগরি কমিটির (টিসি’র) প্রস্তাবে ক্যাবের আপত্তি রয়েছে।
৫. সরকারি, যৌথ ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্লান্টসমূহে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট ব্যয়সমূহে অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় চিহ্নিত ও পরিমাণ নির্ধারণ এবং প্রতিকারের লক্ষ্যে স্বার্থসংঘাত মুক্ত পক্ষরা প্রতিনিধি নিয়ে একটি কমিটি প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই প্রস্তাব নওপাজেপাকো’র খুলনা ডিজেল বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং যৌথ মালিকানাধীন পায়রা কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য।
৬. নবায়নযোগ্য জ্বালানি (আরই) উন্নয়নে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বাজার আরই-এর জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড হতে হবে। এ জন্য বিইআরসি থেকে বিদ্যুৎ বিভাগে সুপারিশ প্রেরণের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
৭. পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে যে-পরিমাণ অর্থ বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল থেকে ইকুইটি বিনিয়োগ করা হয়, সে-পরিমাণ অর্থের অনুপাতিক শেয়ার ভোক্তাদের পক্ষে পিডিবিকে দেওয়ার আদেশের প্রস্তাব করা হয়েছে।
৮. বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিলের অর্থ কেবলমাত্র পিডিবি’র গ্যাস ও আরই বিদ্যুৎ উন্নয়নে ভোক্তাদের ইকুইটি হিসেবে বিনিয়োগ নিশ্চিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
৯. আরইবি ও সামিট পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে সম্পাদিত অবৈধ সম্পূরক চুক্তি বাতিলের জন্য আরইবিকে আদেশ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
১০. বিইআরসি’র নিকট পেশকৃত ক্যাবের সকল অভিযোগ জরুরি ভিত্তিতে নিম্পিত্তির প্রস্তাব করা হয়েছে।
১১. বিদ্যুৎ খাতে সুশাসন, দক্ষতা ও সক্ষমতা উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ খাতের প্রতিটি লাইসেন্সির প্রায় শতভাগ শেয়ারের মালিক পিডিবি। তাই এসব লাইসেন্সিদের ওপর পিডিবি’র কর্তৃত্ব এবং পিডিবি ও বিইআরসি’র নিকট তাদের জবাবদিতিা নিশ্চিত করা এবং বিইআরসি’র নিকট পিডিবি'র জবাদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যুৎ খাতকে স্বার্থসংঘাত মুক্ত হতে হবে। তাই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত প্ৰশাসনকে আমলামুক্ত করা প্রস্তাব করা হয়েছে।
নাগরিক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান, ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও জ্বালানি উপদেষ্টা জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বদরুল ইমাম প্রমুখ।