চাকরি ও বাসস্থানের দাবিতে জন্মান্ধ অঞ্জনার সংবাদ সম্মেলন
পৃথিবীর আলো দেখার সুযোগ হয়নি কুষ্টিয়ার অঞ্জনা রানী হালদারের। জন্মান্ধ তিনি। তবুও জীবনযুদ্ধে থেমে থাকেননি। অঞ্জনার সামনে কোনো সংকটই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
জন্মান্ধ হয়েও জীবন-সংগ্রামে দমে যাননি এই নারী। দৃষ্টিহীনতা আর দারিদ্র্যের সঙ্গে একাই লড়াই করে ইতিহাস বিভাগ থেকে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এরপরও কোনো চাকরি না পেয়ে গান গেয়ে ও টিউশনি করে সংসার চালান তিনি।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে অঞ্জনা রানী হালদার কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে সরকারি চাকরি ও বাসস্থান চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। অন্ধ শ্রুতিলিপির মাধ্যমে নিজের অসহায় জীবনালেখ্যর করুণচিত্র তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জন্মান্ধ অঞ্জনা রানী হালদার। লিখিত বক্তেব্যে অঞ্জনা বলেন, জন্মগতভাবে অন্ধ হওয়া সত্ত্বেও মাথানত না করে নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও প্রতিকূলতা পেরিয়ে নিজেকে একজন যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলেছি নিজেকে।
কুষ্টিয়ার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্কুল থেকে শুরু করে প্রাইমারি, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে সর্বশেষ ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক সম্মানসহ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন ২০১৭ সালে। একই সঙ্গে কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমি থেকে চার বছর মেয়াদি সংগীত শিক্ষায় ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেছেন।
তিনি আরও বলেন, অভাব আর দৃষ্টিহীনতার মাঝে অনেক দুঃখ-কষ্টে বেড়ে উঠতে হয়েছে জীবন যুদ্ধ করে। প্রতিনিয়ত পদে পদে সংকট আর সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কিন্তু আমি কোনোদিন থেমে যাইনি। মনোবল নিয়ে বাস্তবতার সঙ্গে জীবনের যুদ্ধে সফলতা ছিনিয়ে আনার চেষ্টা করেছি, এখনও করছি। জীবনে প্রচুর পরিশ্রম করছি। মা-বাবার সহযোগিতা ও আমার নিরলস কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এত দূর পৌঁছেছি। আমার মেধা আছে, তবুও চাকরি পাচ্ছি না। প্রতিবন্ধী হওয়ায় মাস্টার্স পাস করেও চাকরি হচ্ছে না। এখন একটা সরকারি চাকরি চাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। আমি তার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ চাই। তাকে জীবনযুদ্ধের গল্প শুনিয়ে একটি সরকারি চাকরি ভিক্ষা চাইব। চাকরি পেলে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পাশাপাশি পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।
এ সময় অঞ্জনার মা ফুলমালা হালদারসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অঞ্জনা রানী হালদার কুষ্টিয়া পৌর এলাকার বিবি নন্দী সড়কের অর্পিত সরকারি জমির উপর পরিত্যক্ত ঘরে বসবাসকারী শারীরিক প্রতিবন্ধী মান্দারি হালদার ও ফুলমালা হালদারের জন্মান্ধ মেয়ে।