জাপানে মাসে ৫০০ টন রপ্তানি করার চিন্তা করছে এমারেল্ড অয়েল
পাঁচ বছর পর আবার বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসা এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড তাদের উৎপাদিত রাইস ব্র্যান তেল রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাইস ব্র্যান তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে জাপানে, যেখানে প্রতি মাসে ৫০০ টন করে রপ্তানি করার চিন্তা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
গত ২৮ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জাপানে রাইস ব্র্যান তেল রপ্তানির অনুমোদন চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে এমারেল্ডে বিনিয়োগ করা জাপান-বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেড। কোম্পানিটির এমন আবেদনের পরদিনই রাইস ব্র্যান তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
মিনোরি বাংলাদেশের নতুন বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে আবার বাণিজ্যিক উৎপাদনে ফেরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এমারেল্ড অয়েল। কোম্পানিটির রাইস ব্র্যান তেলের দুটি ইউনিটের একটি সচল রয়েছে, যেখান থেকে প্রতিদিন ৩৫ টন ক্রুড অয়েল উৎপাদন হচ্ছে। ক্রুড অয়েল পরিশোধন করে প্রতিদিন প্রায় ২৬ টন পরিশোধিত রাইস ব্র্যান তেল উৎপাদন করছে কোম্পানিটি। পরিশোধিত তেল ইতোমধ্যেই দেশের বাজারে বাজারজাত করা হচ্ছে। আর গত ৯ জানুয়ারি থেকে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে কোম্পানিটি ক্রুড অয়েল বিক্রি করছে।
জাপানের প্রধান ভোজ্যতেল হচ্ছে রাইস ব্র্যান তেল। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় জাপানে রাইস ব্র্যান তেল রপ্তানিতে ভালো দামও পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন এমারেল্ডের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
রপ্তানির বিষয়ে এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, দেশে রাইস ব্র্যান তেলের যে মূল্য পাওয়া যায়, জাপানে রপ্তানি হলে অন্তত দ্বিগুণ দর পাওয়া যাবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রতি মাসে ৫০০ টন পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল জাপানে রপ্তানি করব।
বর্তমানে উৎপাদক কোম্পানিগুলো দেশের বাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত রাইস ব্র্যান তেল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে থাকে। আর পরিশোধিত তেল বিক্রি হয় প্রতি টন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। কোম্পানিটি যদি লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক পরিশোধিত ও অর্ধেক অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করতে পারে তাহলে দেশের বাজার দর হিসেবেই বছরে প্রায় ৯৩ কোটি টাকার তেল রপ্তানি করতে পারবে। যদিও জাপানে এর মূল্য অনেক বেশি।
বর্তমানে এমারেল্ডের বার্ষিক অপরিশোধিত তেল উৎপাদন সক্ষমতা হচ্ছে ১২ হাজার ৬০০ টন। এর মধ্যে জাপানে রপ্তানি হবে ৬ হাজার টন। অবশিষ্ট ৬ হাজার ৬০০ টন দেশের বাজারে বিক্রি হবে। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ বাজারে তেল বিক্রি থেকে আরও ৯০ কোটি টাকারও বেশি আয় হতে পারে কোম্পানিটির। এর বাইরে ডিওআরবি থেকে আরও অন্তত ৭৫ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। সবমিলিয়ে এমারেল্ডের বার্ষিক আয় ২৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ২০১৬ সালে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এমারেল্ড অয়েলের। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেষ্টায় ২০২১ সালে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে। বন্ধ থাকা কোম্পানিটিতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসে মিনোরি বাংলাদেশ। প্রায় ৪৫ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ ও নতুন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এমারেল্ডে প্রাণ ফিরিয়ে আনে মিনোরি।
দেশে ভোজ্যতেলের বাজারে অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ মে রাইস ব্র্যান তেল রপ্তানি নিষিদ্ধ করে সরকার। তবে অভ্যন্তরীণ বাজারে রাইস ব্র্যান তেলের চাহিদা কম থাকায় উৎপাদকরা তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
গত ২৮ জুন রাইস ব্র্যান তেল রপ্তানির অনুমোদন চেয়ে এমারেল্ডে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মিয়া মামুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে মিয়া মামুন জানান, বাংলাদেশ থেকে জাপানে রাইস ব্র্র্যান তেল রপ্তানির উদ্দেশ্যে এমারেল্ডে বিনিয়োগ করে মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেড। তিনি জানান, এসইসির উদ্যোগে এমারেল্ডের শেয়ার মিনোরি বাংলাদেশের মাধ্যমে ক্রয় করি এবং জরাজীর্ণ কারখানা ২০২১ সালের মার্চ থেকে পূর্ণ মেরামত শুরু করি। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি থেকে উৎপাদনে আসে এমারেল্ড অয়েল। কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না থাকায় উৎপাদিত তেল পরিশোধন করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাসের পাশাপাশি এলপিজি ব্যবহার করে পরিশোধিত তেল উৎপাদন করা হচ্ছে।
গত ২৮ জানুয়ারি বাণিজ্য সচিবকে দেওয়া চিঠিতে মিয়া মামুন জানান, নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমরা উৎপাদিত তেল জাপানে রপ্তানি করতে পারছি না। যেহেতু জাপান থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রাইস ব্র্যান তেলের জন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা হয়েছে, সেহেতু এই তেল রপ্তানি করা অপরিহার্য। তাই এমারেল্ডের উৎপাদিত রাইস ব্র্যান তেল মিনোরির মাধ্যমে জাপানে রপ্তানির অনুমোদন চান জাপানি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান। মিনোরির আবেদন এবং দেশে চাহিদা কম থাকায় গত ২৯ জুন রাইস ব্র্যান তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নেয় সরকার।