স্বামী-স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে এলোপাতাড়ি কোপ, স্ত্রীর মৃত্যু
গোপালগঞ্জে পাওনা টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে সুদের কারবারিরা স্বামী-স্ত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়েছে। এতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ঝিমি আক্তারের (৪০) মৃত্যু হয়েছে। আহত স্বামী নুর আলম মুন্সিকে (৫০) সংকটজনক অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় পুলিশ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এ ঘটনাটি ঘটেছে রোববার (৩ জুলাই) গভীর রাতে মুকসুদপুর উপজেলার পাইকদিয়া গ্রামে। এ ঘটনায় নুর আলম মুন্সির ভাই হাবিবুর রহমান মুন্সি বাদী হয়ে আজ সোমবার মুকসুদপুর থানায় ২৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়, গেল ইরি-বোরো মৌসুমে ঝিমি বেগমের স্বামী নুর আলম মুন্সী প্রতিবেশি সুদের কারবারী অসিম মোল্লার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ করে জমি চাষাবাদ করেন। টাকা নেওয়ার সময় তিনি অসিম মোল্লাকে আসল টাকাসহ সুদ হিসেবে ৫০ মণ ধান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ক্ষেতের ধান পাকার পর বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ধান তলিয়ে পচে নষ্ট হয়ে যায়। এতে নুর আলম নিঃস্ব হয়ে পড়েন। এ কারণে ধান ও টাকা পরিশোধ করতে পারেননি নুর আলম। এ নিয়ে সম্প্রতি এক সালিশ বৈঠকে আগামী ১৫ নভেম্বর এ টাকা পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দেন নূর আলম মুন্সি। এর আগেই রোববার রাত ১১টার দিকে অসিম মোল্লা তাদের বাড়িতে সালিশের কথা বলে স্বামী-স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে গেলে সুদসহ টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে নুর আলমের সাথে বাকবিতণ্ডা হয় অসিম মোল্লা ও তার লোকজনের। এক পর্যায়ে নূর আলমকে সুদের কারাবারি অসিম মোল্লা ও তার লোকজন কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। এ সময় স্ত্রী ঝিমি আক্তার ছুটে গিয়ে স্বামীকে বাঁচাতে গেলে তাকেও কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক আহত করা হয়। পরে তাদেরকে স্থানীয়রা মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঝিমি আক্তারকে মৃত ঘোষণা করেন৷ তার স্বামী নুর আলমকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন মুকসুদপুর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক।
মুকসুদপুর হাসপাতালে রোববার রাতে কর্মরত ডা. নিলয় রঞ্জন বল্লভ জানান, হাসপাতালে আনার অনেক আগেই ঝিমি বেগমের মৃত্যু হয়েছে। তার স্বামীর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তাই রাতেই তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নূর আলমের মেয়ে নীলিমা আক্তার (১১) বলে, আমার বাবাকে সাবেক মেম্বর মিজান মোল্লা রাত ১০টার দিকে ফোন করে ডেকে নেয়। সাথে আমার মাও যায়। তারপর তারা আমার মাকে মেরে ফেলেছে। বাবার অবস্থাও খারাপ। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
অভিযুক্ত সাবেক মেম্বর মিজান মোল্লা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাকে ফাঁসাতে প্রতিপক্ষ এটি রটাচ্ছে। আমি গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা আছি। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমি নুর আলমকে ফোন দেইনি।
নুর আলমের প্রতিবেশি আকবর মজুমদার বলেন, সুদের কারবারীরা দস্যু প্রকৃতির মানুষ। সালিশে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। তারপরও নুর আলমকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল তারা। নুর আলম আমাকে বিষয়টি জানায়। পরে তাকে নিয়ে আমি থানায় গিয়ে ওসি সাহেবকে বিষয়টি অবহিত করি।
মুকসুদপুর থানার ওসি মো. আবু বকর মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পাওনা টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে ঝিমি বেগম নামে এক নারী খুন হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে৷ এ ব্যাপারে ২৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। রোববার রাতেই ৮ জনকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আটক করে এ মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ আড়াইশ বেড জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ পাইকদিয়া গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷