ফাঁকা হচ্ছে রাজধানী, চাপ পড়েছে মহাসড়কে
আকাশ চৌধুরী। রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে গাবতলী পর্যন্ত বাসে পৌঁছাতে আজ বিকেলে তাঁর সময় লেগেছে মাত্র ২৫ মিনিট। কর্মদিবসের যেকেনো দিন এই পথ পাড়ি দিতে এক ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় লাগত। ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরছেন তিনি। কিন্তু, গাবতলীতে গিয়ে বুঝতে পারেন—ফাঁকা হয়ে যাওয়া ঢাকার পরিবহণের চাপ এখন সেখান থেকেই শুরু।
আকাশ চৌধুরী গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীতে যাচ্ছেন। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘গাবতলী পর্যন্ত আসতে সময় লেগেছে মাত্র ২৫ মিনিট। আর গাবতলী পৌঁছানোর পর থেমে থেমে গাড়ি চলছে। সামনেও জ্যাম আছে।’
এ দৃশ্য শুধু গাবতলীর, বিষয়টি তেমন নয়। রাজধানীর গুলিস্তান কিংবা সায়েদাবাদেও একই দৃশ্য। কারওয়ান বাজার থেকে শাহবাগ হয়ে গুলিস্তান পর্যন্ত রাস্তায় যানজট খুব একটা লক্ষ্য করা যায়নি। তবে, গুলিস্তান গিয়েই দেখা মিলল, যানজটের।
ফরিদ উদ্দিন থাকেন রাজধানীর কলাবাগানের কাঁঠালবাগান এলাকায়। তিনি আজ বৃহস্পতিবার পরিবারের চার সদস্যসহ কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা হন। গুলিস্তান গিয়ে তিনি দেখেন, অনেক যানজট। অথচ, বাসা থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত যেতে তাঁর সময় লেগেছে ৩০ মিনিটের মতো।
বিকেলে ফরিদ উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদের দিকে অনেক যানজট ছিল। অথচ, ফার্মগেট, শাহবাগ, প্রেসক্লাবের দিকে খুব একটা ভিড় ছিল না। ঢাকার ভেতর থেকে লোকজন এখন গ্রামে যাচ্ছে। ফলে, ঢাকার প্রবেশদ্বার বা বের হওয়ার স্থানগুলোতে এখন বেশি জট।’
তবে, শুধু রাজধানী থেকে বের হওয়ার স্থানগুলোতে বেশি যানজট রয়েছে, সেকথা পুরোপুরি ঠিক না। রাজধানীর মধ্যে অধিকাংশ বিপণিবিতান এলাকাগুলোতে বেড়েছে মানুষ ও গাড়ির চাপ। রাজধানীর নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড ও পান্থপথ এলাকায় কেনাকাটার জন্য মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
সরেজমিনে রাজধানীর গাবতলী, কল্যাণপুর, গুলিস্তান ও যাত্রাবাড়ী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বাস কাউন্টার এলাকাগুলোতে বেশি যানজট ও মানুষ ঘোরাফেরা করছে। আবার ধানমণ্ডি, কলাবাগান, ফার্মগেট, আসাদগেট, শাহবাগসহ অনেক এলাকায় রাস্তায় খুব একটা ভিড় নেই।
অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়—আর মাত্র দুদিন বাদেই ঈদ। ঈদ উপলক্ষে এখন মানুষ নাড়ির টানে গ্রামে ছুটছে। এ কারণে ঢাকার ভেতরে গাড়ির চাপ কমেছে। এই চাপ গিয়ে ঠেকেছে রাজধানীর বহির্মুখে।
আমাদের মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ এখন ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করায়, মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর টোল সেন্টারের সামনে থেকে থেমে থেমে কয়েক কিলোমিটার যানজট দেখা যায় আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে। তবে সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে গাবতলী থেকে পাটুরিয়া হয়ে ওইসব জেলায় অর্ধেক পরিবহণ চলায় এই রুটে যানজট খুব একটা চোখে পড়েনি। অপরদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর সেতু থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত সারা দিন যানজট লেগেই ছিল। আবার উত্তরাঞ্চলের ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী সড়কের টঙ্গী থেকে কোনাবাড়ি চৌরাস্তা পর্যন্ত বেশ যানজট রয়েছে সকাল থেকেই। অবশ্য বাইপাইল থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত সড়কে থেমে থেমে যানজট থাকলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। আর রাজধানী থেকে দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে যাতায়াত করা যাত্রীরা এবার পদ্মা সেতুর কারণে প্রায় অর্ধেক সড়কপথে যাওয়ায় লঞ্চে যাত্রীদের চাপ নেই বললেই চলে। ঈদকে সামনে রেখে সদরঘাটে যে চিরচেনা ভিড় লক্ষ্য করা যায়, এবার সেটা চোখে পড়েনি।