শিনজো আবেকে গুলি করে হত্যা, বিশ্বনেতাদের নিন্দা
বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ দেশ জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের হত্যাকাণ্ড বিশ্ব নেতাদের স্তম্ভিত করেছে। তাঁরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। আজ শুক্রবার এ হতাকাণ্ড ঘটে।
ইরান এটিকে ‘সন্ত্রাসবাদী কাজ’ বলে অভিহিত করেছে এবং স্পেন এই ‘কাপুরুষোচিত হামলার’ নিন্দা জানিয়েছে।
৬৭ বছর বয়সী আবে পশ্চিম জাপানের নারাতে রাজনৈতিক প্রচারণার বক্তব্য দেওয়ার সময় পিছন থেকে গুলিবিদ্ধ হন। এরপর তাঁকে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন আবেকে।
স্বাস্থ্যগত কারণে ২০২০ সালে পদত্যাগ করার আগে আবে ছিলেন জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী।
এ হতাকাণ্ডের খবর পেয়ে জাপানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা দেশজুড়ে প্রচারণা অনুষ্ঠান থেকে তড়িঘড়ি করে টোকিওতে ফিরে এসেছেন। কিশিদা এ হতাকাণ্ডকে ‘জঘন্য ও বর্বর’ বলে অভিহিত করেছেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এ হতাকাণ্ডকে ‘ঘৃণ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। জনসন এক টুইটে লিখেছেন, ‘তাঁর নেতৃত্ব অনেকেরই মনে থাকবে। আমি তাঁর পরিবার, বন্ধু এবং জাপানি জনগণের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছি। এই শোকাবহ ও দুঃখের সময়ে যুক্তরাজ্য আপনাদের পাশে রয়েছে।’
ইরান এই হতাকাণ্ডকে ‘সন্ত্রাসবাদী কাজ’ বলে নিন্দা করেছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ‘একটি দেশ যে সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে এবং সন্ত্রাসীদের হাতে তাদের মহান নেতাকে হারিয়েছে আমরা তা জেনেছি। আমরা আন্তরিকভাবে ও উদ্বেগের সাথে এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।’
জাপানের সর্বজনীন সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান এনএইচকে পাবলিক ব্রডকাস্টার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নারার একটি ট্রেন স্টেশনের বাইরে আবের বক্তৃতা দেওয়ার ফুটেজ প্রচার করেছে। এতে দেখা যায়, নেভি ব্লু স্যুট পরে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন, যখন দুটি গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে, তখন তিনি হাত তুলছেন। এরপরই আবেকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
এর কিছুক্ষণ পরেই হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বিরুদ্ধে সহিংস হামলার কথা শুনে আমরা হতবাক ও দুঃখিত।’
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা আমাদের সকলকে অন্তর থেকে নাড়া দেয়।’
এনএইচকের ভিডিওতে নিরাপত্তারক্ষীদের ধূসর শার্ট পরা একজন ব্যক্তির ওপরে লাফিয়ে উঠতে দেখা যায়, যিনি ফুটপাতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছেন। মাটিতে একটি ডাবল ব্যারেলযুক্ত ডিভাইস, যা হাতে তৈরি বন্দুক বলে মনে করা হচ্ছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এক টুইটে লিখেছেন, আবের ওপর ‘জঘন্য হামলায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত।’ তিনি আবেকে ‘একজন মহান প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে শ্রদ্ধা জানান। তিনি আরও বলেন, ‘ফ্রান্স জাপানের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে।’
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আবের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার স্মারক হিসেবে শনিবারকে একদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন।
এক টুইটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি ‘ভারত-জাপান সম্পর্ককে একটি বিশেষ কৌশলগত এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের পর্যায়ে উন্নীত করার জন্য অপরিসীম অবদানের জন্য’ অ্যাবের প্রশংসা করেছেন। তিনি আরও লিখেছেন, ‘আজ, সমগ্র ভারত জাপানের সঙ্গে শোক করছে এবং আমরা এই কঠিন মুহূর্তে আমরা আমাদের জাপানি ভাই ও বোনদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধার স্মারক হিসেবে ৯ জুলাই একদিনের জাতীয় শোক পালন করা হবে।’
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ আবের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি এক টুইটে জানিয়েছেন, ‘স্পেন এই কঠিন সময়ে জাপানের জনগণের পাশে আছে।’
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ বলেছেন, ‘আবে অস্ট্রেলিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন এবং ‘বিশ্ব মঞ্চে একজন বিশাল বক্তিত্ব ছিলেন। তাকে আমরা খুব মিস করব।’
ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি অ্যাবের মৃতুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ইতালি আবের পরিবার, সরকার ও জাপানি জনগনের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি অ্যাবের এই ‘অসময়ের মৃত্যু’তে শোক প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন তিনি ‘সকলের জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে সর্বদা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, চীন আবের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছে।