রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাল সনদ ও নকল জাতীয় পরিচয়পত্র বানাতেন তাঁরা
কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘরে বসে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিভিন্ন জাল সনদপত্র এবং বিপুল জাল সনদপত্র তৈরির সরঞ্জামসহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৮ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিয়ন) সদস্যেরা।
বুধবার রাতে কক্সবাজারের উখিয়া লম্বাশিয়া ১ নম্বর ক্যাম্পে আবদুল্লাহ নামের এক রোহিঙ্গার ঘর থেকে পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরা হলেন—মো. আবদুল্লাহ (৩৭), আবুল খায়ের (১৮), মো. ইসমাইল (৪৫), মো. ত্বালহা (৬০) ও মো. হারুন (৩৬)।
এ তথ্য নিশ্চিত করেন ৮ আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন।
কামরান হোসেন বলেন, ‘গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরা রোহিঙ্গাদের ঘরে বসে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অল্প সময়ে ভুয়া এনআইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং বিভিন্ন জাল সনদ তৈরি করে আসছিল। এ ধরনের ভুয়া জাল সনদ ও আইডি তৈরির কথা আমাদের কাছে খবর এলে আমাদের একটি টিম ওই চক্রের সঙ্গে জড়িতদের আটকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে প্রতারকচক্রের পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করে।’
অভিযানে তল্লাশি করে চারটি ল্যাপটপ, আটটি স্মার্টফোন, চারটি পেনড্রাইভ, দুটি স্ক্যানার+প্রিন্টার, ২৮টি অনলাইন ডুপ্লিকেট জন্মনিবন্ধন, ১১টি জন্মনিবন্ধন তথ্য যাচাই, ৩০টি ডুপ্লিকেট জন্মসনদ, ২০টি ডুপ্লিকেট এনআইডি, ২০০টি এনআইডির ফটোকপি, সোনালী ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের চেক বই ও জমা দেওয়ার বই, পাঁচটি সিল, একটি সমবায় সমিতির নিবন্ধন সনদপত্র, ২০টি শাহপুরি বাস্তুহারা আদর্শ গ্রাম সমবায় সমিতি লি.-এর সদস্য ফরম, ৩৫টি টাকা জমা দেওয়ার পাস বই, আটটি চার নম্বর রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স, যার প্রত্যেকটিতে মো. আবদুল্লাহ নামে লিপিবদ্ধ, ৪ নম্বর রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের জাতীয়তা সনদসহ আরও বিভিন্ন নামের চারটি জাতীয়তা সনদ, ৪ নম্বর রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিহীন সনদ পাঁচটি, আবদুল্লাহ নামের ইলেক্ট্রিক বিলের কাগজ পত্র, বিভিন্ন ধরনের জায়গা জমির দলিল ও খতিয়ান, মো. ইসমাইলের জন্ম সনদ ও এনআইডি কার্ড, মো. ত্বালহার সিটি করপোরেশনের জাতীয় সনদ, নকল জন্মসনদ এবং মো. হারুনের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জব্দ করা হয়।
প্রাথমিকভাবে আটক ব্যক্তিরা স্বীকার করেন—তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে নকল বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্ট তৈরি করে দিয়ে বিপুল অর্থ উপার্জন করে আসছে। সাধারণ রোহিঙ্গারা মূলত বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ এবং বিদেশে গমনের জন্য পাসপোর্ট তৈরির জন্য উপর্যুক্ত দালাল চক্রকে মোটা অঙ্কের টাকা প্রদান করে।
গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ৮ আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন।