আজ সাংবাদিক নির্মল সেনের ৯২তম জন্মদিন
বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট, বাম রাজনীতির পুরোধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক নির্মল সেনের ৯২তম জন্মদিন আজ বুধবার। ১৯৩০ সালের এই দিনে তিনি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার দিঘীরপাড় গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সুরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। মা লাবণ্যপ্রভা সেনগুপ্তা। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে নির্মল সেন ছিলেন পঞ্চম। নির্মল সেনের বাবা সুরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত কোটালীপাড়ার প্রাচীন বিদ্যাপীঠ কোটালীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনের গণিতের শিক্ষক ছিলেন। এর আগে সুরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ঢাকার ইস্ট বেঙ্গল ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করতেন।
দেশ বিভাগের পরে নির্মল সেনের বাবা-মা অন্য ভাই-বোনদের সঙ্গে নিয়ে কলকাতা চলে যান। জন্মভূমির প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসার কারণে তিনি এদেশে থেকে যান। নির্মল সেন ঝালকাঠি জেলায় তার পিসির বাড়িতে থেকে কলসকাঠি বিএম একাডেমি থেকে ১৯৪৪ সালে ১৪ বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাস করেন। পিসির বাড়িতে যাওয়ার আগে নির্মল সেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার জিটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে এক বছর লেখাপড়া করেন। তিনি বরিশাল বিএম কলেজ থেকে আইএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এ ও মাস্টার্স পাস করেন।
স্কুলজীবনে নির্মল সেনের ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। কলেজ জীবনে তিনি অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আরএসপিতে যোগ দেন। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে নারায়ণগঞ্জের আদমজীতে শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং দীর্ঘদিন শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রাজনীতি করতে গিয়ে নির্মল সেনকে জীবনের অনেকটা সময় জেলে কাটাতে হয়েছে।
১৯৬১ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার মধ্য দিয়ে নির্মল সেন তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন। তারপর দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়াও ১০ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে অতিথি শিক্ষক ছিলেন।
লেখক হিসেবেও নির্মল সেনের সুনাম রয়েছে। তার লেখা ‘পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ’, ‘মানুষ সমাজ রাষ্ট্র’, ‘বার্লিন থেকে মস্কো’, ‘মা জন্মভূমি’, ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’, ‘আমার জীবনে ৭১ এর যুদ্ধ’, ‘আমার জবানবন্দি’ উল্লেখযোগ্য।
নির্মল সেন ২০০৩ সালের ১০ অক্টোবর ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এরপর দেশে-বিদেশে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরে ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নির্মল সেনের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, তার মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করা হয়।
নির্মল সেন স্মৃতি সংসদের সভাপতি সাংবাদিক মিজানুর রহমান বুলু বলেন, নির্মল সেন স্কুল এন্ড মহিলা কলেজের পক্ষ থেকে নির্মল সেনের জন্মদিন পালনে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসের প্রথম প্রহরে নির্মল সেনের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হবে। আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে আমাদের কর্মসূচি শেষ হবে।