ওয়ানডেতেও বাংলাদেশকে হেসেখেলে হারাল জিম্বাবুয়ে
দুদিন আগেই বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের উচ্ছ্বাস করে জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের সেই ক্ষত না শুকাতেই এবার আরও বড় ধাক্কা দিল স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডেতেও দাপট দেখিয়ে জিতল জিম্বাবুয়ে। আজ শুক্রবার সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা।
চার হাফসেঞ্চুরিতে জিম্বাবুয়েকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যই দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেই লক্ষ্যকেও মামুলি বানিয়ে ছাড়ল জিম্বাবুয়ে। কাইয়া আর সিকান্দার রাজার দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে হেসেখেলে জিতল জিম্বাবুয়ে। ২০১৩ সালের পর এবার জিম্বাবুয়ের কাছে হারের তিক্ত স্বাদ পেল তামিম ইকবালের দল।
হারারের স্পোর্টস ক্লাব মাঠে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ৩০৩ রান তোলে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮১ রান করেছেন লিটন দাস। অবশ্য তাঁর ইনিংস আরও বড় হতে পারতো। কিন্তু পেশিতে চোট পেয়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয় ডানহাতি এই ব্যাটারকে। লিটনের পাশাপাশি রানের দেখা পেয়েছেন এনামুল হক বিজয়, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমও।
এই রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই জোড়া ধাক্কা খায় জিম্বাবুয়ে। হারিয়ে ফেলে দুই ওপেনার রেজিস চাকাভা ও তারিসাই মুসাকান্দার উইকেট। ইনিংসের প্রথম ওভারেই মুস্তাফিজুর রহমানের করা ডেলিভারি অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে আরও বেরিয়ে যাচ্ছিল বল। সেটি চাকাভার ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে আসে স্টাম্পে। ৬ বলে ২ রান করেন অধিনায়ক।
পরের ওভারেই মুসাকান্দার উইকেট তুলে নেন শরিফুল ইসলাম। এরপর রানআউট হয়ে ফেরেন মাসাকাদজা। ১৩ ওভারে ৩ উইকেট হারানোর পর অনেকটা চাপেই পড়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
কিন্তু চতুর্থ জুটিতে সেই চাপ কাটিয়ে দলকে উদ্ধার করেন সিকান্দার রাজা ও ইনোসেন্ট কাইয়া। দুজনে মিলে জিম্বাবুয়েকে ম্যাচে ফেরান। এরপর চোখ রাঙান বাংলাদেশকে। লম্বা সময় বাংলাদেশকে ভোগান দুজন। দুজনেই তুলে নেন সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ৪১তম ওভারে জমে যাওয়া এই জুটি ভাঙেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ১১০ রানে কাইয়াকে থামান তিনি। কিন্তু কাইয়া ফিরলেও ততক্ষণে ম্যাচ নিজেদের নাগালে নিয়ে নেয় জিম্বাবুয়ে। উইকেটে থিতু হয়ে থাকা আরেক সেঞ্চুরিয়ান সিকান্দার রাজা দলকে জয় এনে দিয়েই রাজার মতোই মাঠ ছাড়েন। শেষ পর্যন্ত ১০৯ বলে ১৩৫ রানের ইনিংস উপহার দেন রাজা। আর ১০ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় জিম্বাবুয়ে।
এর আগে টস জিতে বাংলাদেশকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় জিম্বাবুয়ে। আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুর জুটিতে দারুণ করে বাংলাদেশ। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস মিলে গড়েন শতরানের জুটি। দুই ওপেনার মিলে শুরুটা সাবধানী করেন, এরপর ধীরে ধীরে হাত খুলে খেলেন। এর মধ্যেই লিটনকে সঙ্গে নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান তামিম। শেষ পর্যন্ত ২৬তম ওভারে এসে এই জুটি ভাঙে জিম্বাবুয়ে।
ওই ওভারে সিকান্দার রাজার লেংথ বলটি মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারার চেষ্টা করেন তামিম। কিন্তু পিচ করে একটু থমকে আসে বল। তামিমের ব্যাটের কানায় লেগে সহজ ক্যাচ যায় শর্ট থার্ড ম্যানে। সেখানে ক্যাচ নেন ইনোসেন্ট কাইয়া। মোট ৯ বাউন্ডারিতে ৮৮ বলে ৬২ রান করে শেষ হলো তামিমের ইনিংস। আর ওপেনিং জুটি ভাঙল ১১৯ রানে।
এরপর লিটনের সঙ্গে জুটি বাঁধেন তিন বছর ওয়ানডে একাদশে ফেরা এনামুল হক বিজয়। এই জুটি গড়ার পথে ব্যক্তিগত অর্ধশতক স্পর্শ করেন লিটন দাস। এনামুলের সঙ্গে ৫২ রানের জুটি উপহার দেন লিটন। অবশ্য এই জুটি আরো বড় হতে পারত। ব্যাটিং চলাকালীন পেশিতে টান পড়ে লিটনের। সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এই ডানহাতি ব্যাটার। এর পর আর ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি। স্ট্রেচারে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ড্রেসিংরুমে। দুর্দান্ত খেলতে থাকা লিটন ৮৯ বলে ৮১ রানে রিটায়ার্ড হার্ট হন। তার ইনিংসে ছিল ৯টি বাউন্ডারি ও একটি ছক্কা।
লিটন ফিরলেও অবশ্য বিপদ বাড়েনি বাংলাদেশের। উইকেটে থাকা এনামুল মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে গড়েন আরেকটি জুটি। এই জুটি গড়ার পথেই ৪৭ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন ওয়ানতে তিন বছর পর ফেরা এনামুল।
মুশফিকের জুটি শক্ত জুটি গড়ে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন এনামুল। শেষ পর্যন্ত ৭৩ রান করেন তিনি। ৬২ বলে তাঁর ইনিংসে ছিল ৬টি বাউন্ডারি ও ৩টি ছক্কা। তাঁর সঙ্গে ৪৯ বলে ৫২ রান করেন মুশফিকুর রহিম। আর শেষ দিকে নেমে ১২ বলে ২০ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩০৩/২ (তামিম ৬২, লিটন ৮১ আহত অবসর, এনামুল ৭৩, মুশফিক ৫২*, মাহমুদউল্লাহ ২০*; এনগারাভা ১০-১-৬১-০, নিয়াউচি ৯-১-৬৫-১, মাসাকাদজা ৫-০-৩১-০, জঙ্গুয়ে ১০-০-৫৬-০, বার্ল ১.১-০-৮-০, শুম্বা ৪.৫-০-২৭-০, রাজা ৯-০-৪৮-১, মাধেভেরে ১-০-৫-০)
জিম্বাবুয়ে: ৪৮.২ ওভারে ৩০৭/৫ (চাকাভা ২, মুসাকান্দা ৪, কাইয়া ১১০, মাধেভেরে ১৯, রাজা ১৩৫*, জঙ্গুয়ে ২৪, শুম্বা ১*; মুস্তাফিজ ৯-০-৫৭-১, শরিফুল ৮.৪-০-৫৭-১, তাসকিন ১০-১-৫২-০, মিরাজ ১০-০-৫৯-১, মোসাদ্দেক ৯.২-০-৬৭-১, মাহমুদউল্লাহ ১.২-০-১২-০)।
ফল: জিম্বাবুয়ে ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: সিকান্দার রাজা।