নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা উধাও, হতাশ অভিভাবকরা
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। উপবৃত্তির টাকা পেলেও প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে পারেননি। এমনকি উপবৃত্তির সেই টাকাগুলো অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ ঘটনার দায় নিচ্ছে না কেউ। ফলে হতাশ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
উপজেলায় সরকারি ১০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর এসব বিদ্যালয়ের প্রায় ১২ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী উপবৃত্তির টাকা পেয়ে আসছে। এর ধারাবিকতায় এক মাস আগে উপজেলায় উপবৃত্তিপ্রাপ্ত প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মাসে ৭৫ টাকা করে ছয় মাসে ৪৫০ টাকা এবং প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের প্রতি মাসে দেড়শ টাকা করে ছয় মাসে ৯০০ টাকা উপবৃত্তিপ্রাপ্ত প্রতিটি শিক্ষার্থীর নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেওয়া হয়। উপবৃত্তির টাকা পাওয়ার পর অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলেছেন। আর বিভিন্ন স্কুলের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা তুলতে পারেননি অভিভাবকরা।
তারা বলছেন, টাকা অ্যাকাউন্টে আসার পর নগদের এজেন্ট ও বিভিন্ন দোকানে গেলে তারা জানতে পারেন অ্যাকাউন্টে উপবৃত্তির কোনো টাকা নেই এবং টাকা অ্যাকাউন্টে আসার পরই ক্যাশ আউট হয়ে গেছে। এমনকি অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা টাকা তুলতে গেলে নগদ অ্যাকাউন্টে ঢুকতেই পারছে না বলে জানা গেছে।
উপবৃত্তিপ্রাপ্ত রাতোয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তূর্যর বাবা রাইপ হোসেন বলেন, অনেকে টাকা পেলেও আমার অ্যাকাউন্টে ছেলের উপবৃত্তির টাকার কোনো মেসেজ আসেনি। কয়েকদিন পর আমি বিষয়টি নিয়ে স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায় মেসেজ না এলেও টাকা পাবেন। তাই নগদ এজেন্টের কাছে যোগাযোগ করতে বলেন তারা। এজেন্টের কাছে গেলে তারা নগদের হেল্প লাইনে সহযোগিতা নেওয়ার কথা বলেন। পরে হেল্প লাইনে সহযোগিতা নিতে গেলে পিন রিসেট করে দেয়। এরপর ব্যালেন্স চেক করে দেখা যায় অ্যাকাউন্ট থেকে উপবৃত্তির টাকা ক্যাশআউট হয়ে গেছে।
ওই অভিভাবক আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্কুল ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে বারবার ধরনা দিয়েছি তারপরও কোনো সুরহা পাইনি। তাদের দায়সারা উত্তর। এমন কি বিষয়গুলো নিয়ে দায় নিচ্ছে না কেউ। এতে আমার মতো অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা উপবৃত্তির টাকা নিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
মালশন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মরিয়মের বাবা আব্দুল মজিদ বলেন, আমার মেয়ের অ্যাকাউন্টে মেয়ের উপবৃত্তির টাকা এলেও কে বা কারা ক্যাশআউট করে নিয়েছে। আমি কিছুই জানি না। শেষ পর্যন্ত উপবৃত্তির টাকাটা আর পাইনি।
এ ছাড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি স্কুলের উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বললে তারাও উপবৃত্তির টাকার একই হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে জানান। দ্রুত এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে উপজেলায় উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্টে টাকা দিয়েছে। কীভাবে টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে ক্যাশআউট হয়ে গেছে বা শিক্ষার্থীর অভিবাবকরা কেন টাকা তুলতে পারছেন না—এসবের কিছুই আমি জানি না। তবে কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা অফিসে এসে আমাদের বিষয়গুলো জানিয়েছেন। এরপর বিষয়টি আমি ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি কর্তৃপক্ষ দ্রুত একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।