ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ : গণমাধ্যমবিরোধী কালাকানুন বাতিলের দাবি
গণমাধ্যমবিরোধী সকল কালাকানুন বাতিলের দাবি জানিয়ে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, প্রতিনিয়ত সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যা বেড়েই চলছে। কোনো ঘটনারই সুষ্ঠু বিচার হচ্ছে না। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও সাগর-রুনীসহ কোনো সাংবাদিক হত্যার বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি। একের পর এক কালাকানুনের কারণে স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ এখন রুদ্ধ।
আজ সোমবার দুপুরে সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন বন্ধ, সাগর-রুনীসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিরোধী সকল কালাকানুন বাতিল ও বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেওয়ার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের একাংশের উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন- বিএফইউজের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন গাজী। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- দৈনিক নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, বিএফইউজের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোদাব্বের হোসেন, ডিআরইউর সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন ও রফিকুল ইসলাম আজাদ, বিএফইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশীদ আলম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নুরুল হাসান খান, ডিইউজের সিনিয়র সাংবাদিক কায়কোবাদ মিলন, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাসিম সিকদার, সাবেক সভাপতি একেএম মোহসীন, জাতীয় প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য শাহনাজ পলি, ডিআরইউর সাবেক নেতা মহিউদ্দিন আহম্মেদ, ডিইউজের দপ্তর সম্পাদক ডি এম আমিরুল ইসলাম অমর, নির্বাহী সদস্য শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক এসোসিয়েশনের সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন ইবনে মঈন চৌধুরী, ডিইউজের সদস্য তালুকদার রুমী, ইকবাল মজুমদার তৌহিদ প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম ও প্রচার সম্পাদক খন্দকার আলমগীর হোসাইন। সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের একটি বিক্ষোভ মিছিল তোপখানা ও পল্টন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
সরকারের উদ্দেশ্যে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, চাল-ডাল, জ্বালানি তেল-গ্যাসসহ নিত্যকার দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষ এখন দিশেহারা। মানুষ আজ অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছে। লুটপাটের কারণে আজ এমন দুরাবস্থা তৈরি হয়েছে। তেল-গ্যাসসহ সকল নিত্যপণ্যের মূল্য অবিলম্বে সাধারণ জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে আনার আহ্বান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশ এখন মানুষ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
সমাবেশে সাংবাদিক হত্যা নির্যাতন বন্ধ, অবিলম্বে সাগর-রুনীসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিরোধী সকল কালাকানুন বাতিল এবং বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, এই সরকার সাংবাদিকদের খুন-গুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। আমাকেও কারাগারে নেওয়া হয়েছিল। এখন পর্যন্ত কোনো মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। সরকারের দুর্নীতি ও অনিয়মে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ। হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ মানুষের আয় বাড়েনি। মানুষ না খেয়ে থাকছে। এটা আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে, এই সরকারের পতন ছাড়া দেশের মানুষের মুক্তি নাই। তাই বিরোধী দলগুলোকে বলবো, এখন আর সভা-সমাবেশ নয়, দুর্বার আন্দোলন করে সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করতে হবে।
ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সরকারের অপশাসনের কারণে বাংলাদেশ মনুষ্য বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নাই। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার ও ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশকে সরকার ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। অর্থের অভাবে প্রান্তিক মানুষ সন্তান পর্যন্ত বিক্রি করে দিচ্ছে। এভাবে দেশ চলতে পারে না। বাংলাদেশকে কার্যকর রাষ্ট্র রাখতে হলে ব্যর্থ সরকারকে বিদায় ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।
ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, অবিলম্বে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। সকল কালাকানুন বাতিল করে সকল গণমাধ্যম খুলে দিতে হবে। তা না হলে সাংবাদিক সমাজ রাজপথে দুর্বার আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।