রাজনীতি
জোটে আর ভোটে আগাম নির্বাচনের বার্তা
নৌকায় ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার ওয়াদা আদায়ের মাধ্যমে আগাম নির্বাচনের আভাস পাচ্ছেন রাজনৈতিক উৎসুকরা। বৃহস্পতিবার সিলেটে জনসভায় তিনি জেলাবাসীর কাছ থেকে এ ওয়াদা আদায় করেছেন। জনসভায় উপস্থিত সবাইকে হাত তুলে তাঁকে ওয়াদা দেওয়ার আহ্বানে বেশ সাড়াও মেলে। সেই নির্বাচনটি কবে এর কোনো ইংগিত বা ব্যাখ্যা তিনি না দিলেও এত আগেভাগে দলীয় প্রতীকে ভোট চাওয়ার রহস্য ভেদের চেষ্টা চলছে বিভিন্ন মহলে।
ক্ষমতাসীন দল ও জোট ছাড়াও বিভিন্ন দলের সাম্প্রতিক অভ্যন্তরীণ তৎপরতায় নির্বাচনী প্রস্তুতি লক্ষ করার মতো। সরকারি দলের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের আওতা বাড়ানোর চেষ্টার সাথে বিরোধী পক্ষের ২০ দলীয় জোটে হাত বাড়ানোর নমুনাও স্পষ্ট। ১৪ দলে শরিক বাড়ানোর উদ্যোগ এরই মধ্যে কিছুটা এগিয়েছেও। বিএনপির সাবেক নেতা ও মন্ত্রী ব্যরিস্টার নাজমুল হুদাকে ১৪ দলে নেওয়ার ঘোষণা এসেছে। তবে, ২০ দলীয় জোটের প্রধান দল বিএনপি জোটের চেয়ে দলের দিকেই বেশি মনোযোগী। এ পক্ষে আগাম নির্বাচনের আলামত বোধ হচ্ছে আরো কদিন আগে থেকেই।
অন্যদিকে বিভিন্ন পদে ওলটপালটের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দলকে জাগিয়ে তোলার কৌশলে এগোচ্ছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও। সরকারের এই মূল শরীক দলটিতে তোলপাড় তুলে তিনি নিজের পরের পদটিতে বসিয়ে দিয়েছেন ছোট ভাই জি এম কাদেরকে। দায়িত্ব নেওয়ার একদিন পরই শেখ হাসিনার সাথে ব্যক্তিগত বোঝাপড়ার কথা উল্লেখ করে জি এম কাদের জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী আগাম নির্বাচন দিতে পারেন। এমন তথ্যের ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, বর্তমান অবস্থাকে প্রধানমন্ত্রী স্বস্তিকর মনে করছেন না। এর আগে আগাম নির্বাচনের আভাস দিয়েছেন এরশাদও। তিনি বলেছেন, আমরা কোথায় আছি? বিরোধী দলে না সরকারি দলে, সেটা দেশের মানুষ বুঝতে পারছে না। যার নেতিবাচক ফল পড়বে নির্বাচনে। তাই জরুরি প্রয়োজনে দল গুছানো দরকার।
এদিকে, আন্দোলনের চেয়ে দল গুছানোকে বেশি জরুরি মনে করছে বিএনপি। মূল দল ও অঙ্গসংগঠনগুলোতে পরিবর্তনের প্রস্তুতি চলছে। দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাহী কমিটি পর্যন্ত ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়ার পুরোটাই চলছে নির্বাচনকে সামনে রেখে। বিএনপিতে গঠনতন্ত্র অনুসারে প্রতি তিন বছর অন্তর দলের কাউন্সিল হওয়ার কথা। কিন্তু ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বরের পর টানা সাত বছর ধরে এ কাউন্সিলটি ‘বকেয়া’ হয়ে আছে। বেশ কয়েকবার প্রক্রিয়া শুরু করেও রাজনৈতিক প্রতিকূলতা ও ধকল কাটিয়ে কাউন্সিল আয়োজন করতে পারেনি।
দলটির নীতিনির্ধারকদের ধারণা দলকে শক্তিশালী করা ছাড়া আগামী দিনের আন্দোলন-নির্বাচন কোনোটাই উৎরানো সম্ভব হবে না। তাই দল গুছিয়ে সময়-সুযোগ বুঝে সরকারের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার পথে এগোতে চায় বিএনপি।
অন্যদিকে, সরকার তার বিপরীত আদশের্র রাজনৈতিক দল ও দক্ষিণপন্থী দলগুলোর সঙ্গে নানা কৌশলে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলছে। এটি আগামী সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করেই। এ প্রক্রিয়ায় ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ ও হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বের একটা বড় অংশের সাথে সরকারের গোপন সমঝোতা এখন আর গোপন পর্যায়ে নেই। এরই মধ্যে ইসলামী ঐক্যজোটের একটি অংশ দীর্ঘ ১৫ বছরের সম্পর্ক ভেঙে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট ছেড়েছে। দলটি ৩০০ আসনে একা নির্বাচন করার ঘোষণাও দিয়েছে। এর আগে বিশদল ছেড়েছে খেলাফত মজলিসের একটি অংশ। নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলে আশা করছে সরকার। কারণ সারা দেশে গোছানো সংগঠন না থাকলেও মাঠপর্যায়ে এই দলগুলোর কিছু প্রভাব আছে। বিশদলের আরেক শরিক জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের একটি অংশও জোট ছাড়তে পারে বলে গুঞ্জন আছে।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সরকার বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বাইরেও ২০ দলের শরিক ইসলামপন্থী দলকে নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। যদিও রাজনৈতিক জোটে আকার বাড়ানোর সংখ্যামূল্য থাকলেও এসব দলের বেশ কটিরই ভোটের মাঠে গুরুত্ব নেই। বাংলাদেশের প্রধান দুই জোটের ক্ষেত্রেই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে বর্তমানে দল আছে ১২টি। এর মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্য দল ৮টি। দুটি কোনো ভোটে অংশ নেয় না। আর দুটির নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনই নেই। একই অবস্থা বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিশদলীয় জোটেও। এ জোটে ১২টি দলই নির্বাচনের অযোগ্য। নির্বাচন যোগ্য আটটির মধ্যে ভোটের মাঠে থাকে ৩-৪টি। এসব দলবাজি-জোটবাজিতে চলমান রাজনৈতিক সংকটমুক্তির আশা না দেখলেও একটি নির্বাচনের ইংগিত পাচ্ছেন অনেকেই। সিলেটের জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর এভাবে ভোট চাওয়ায় ইঙ্গিতটি আরো বাস্তবতা পেয়েছে।
লেখক : বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন