দেশব্যাপী বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল আজ বৃহস্পতিবার ১ সেপ্টেম্বর। দেশের অন্যতম বৃহত্তম এই দলটি পা রাখল ৪৫ বছরে। এদিন সারা দেশে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে। এনটিভি প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে থাকছে এবারের প্রতিবেদন...
খুলনা থেকে থেকে মুহাম্মদ আবু তৈয়ব জানান, খুলনায় বিএনপি পুলিশের বাধা ছাড়াই শোডাউন দিয়েছে। এই শোভাযাত্রায় ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা সভাপতিত্বে কেডিঘোষ রোডে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে। পরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভা যাত্রা বের হয়।
এ সময় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের ছবি এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা হাতে এই শোভাযাত্রাটি কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল উপস্থিত ছিলেন।
ময়মনসিংহ থেকে আইয়ুব আলী জানান, বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিক উপলক্ষে দক্ষিণ ও উত্তর জেলা এবং মহানগর বিএনপি আলাদা কর্মসূচি পালন করেছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা। সকালে উত্তর জেলা দুপুরে মহানগর বিএনপি আলোচনা সভা ও সমাবেশ করে। বিকেলে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সব কর্মসূচিতে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, দক্ষিণ জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু, উত্তরের আহ্বায়ক এ কে এম এনায়েত উল্লাহ কালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ কে এম শফিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াহাব আকন্দ প্রমুখ নেতা বক্তব্য দেন। বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল নেতাকর্মী কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করেন।
নীলফামারী থেকে নূর আলম জানান, ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নীলফামারীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করেছে জেলা বিএনপি। আজ দুপুরে শহরের পৌর বাজারে দলীয় কার্যালয় থেকে এটি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে দলীয় কার্যালয়ে ফিরে সমাবেশে মিলিত হয়।
জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর সরকারের সভাপতিত্বে সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম।
বক্তব্য দেন সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রাহেদুল ইসলাম দোলন ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আখতারুজ্জামান জুয়েল, পৌর বিএনপির সভাপতি মাহবুব উর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আল মাসুদ চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ আযম, জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক মগনি মাসুদুল আলম দুলাল প্রমুখ।
মেহেরপুর থেকে রেজ আন উল বাশার তাপস জানান, শান্তিপূর্ণভাবে মেহেরপুরের গাংনীতে শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। আজ বিকেল সাড়ে ৪টায় উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে বিএনপি।
গাংনী উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল হক মাস্টারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন। এ সময় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে পশ্চিমমালসাদহ এলাকা থেকে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন, হাসপাতাল বাজার এলাকা থেকে গাংনী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলু, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেনে মেঘলা ও পূর্ব মালসাদহ এলাকা থেকে ষোলটাকা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান মনির নেতৃত্বে বিপুল নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয়ের সামনে একত্রিত হয়। পরে দলীয় কর্মসূচি পালিত হয়।
মৌলভীবাজার থেকে এস এম উমেদ আলী জানান, মৌলভীবাজারে বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূনের নেতৃত্বে মিছিল বের হয়।
আজ বিকেলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শহরের কুসুমবাগ এলাকার সিলেট রোড থেকে শোভাযাত্রাটি বের করে এম সাইফুর রহমান রোড হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়।
এই শোভাযাত্রায় নেতাকর্মীদের ঢল নামে এবং সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো মৌলভীবাজার শহর।
এর আগে জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান নিজামের পরিচালনায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তাদের হাতে হাতে দলীয় পতাকা, শহীদ জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, এম সাইফুর রহমান ও এম নাসের রহমানের ছবি সংবলিত প্লাকার্ড, ফেস্টুন ও ব্যানার দেখা যায়।
নেতারা তাদের বক্তব্যে বলেন, ‘রাজপথে আমাদের মিছিল করার অধিকার নেই। মিছিল করতে গেলেই মামলা ও হামলার শিকার হতে হয়।’
বক্তারা দ্রুত তারেক রহমানের নামে সব মিথ্যা মামলা, পরোয়ানা প্রত্যাহার করে তাকে দেশে এসে রাজনীতি করতে দেওয়ার সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে আটকে না রেখে তাকে স্থায়ী জামিন দেওয়ারও দাবি জানান।
নড়াইল থেকে এম. মুনীর চৌধুরী জানান, নড়াইলে বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকালে নড়াইল শহরে পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করে দলের নেতাকর্মীরা। কর্মসূচির মধ্যে ছিল পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, গীতাপাঠ, শোভাযাত্রা, আলোচনাসভা ও দোয়া। বিএনপির একটি অংশ নড়াইল ফেরিঘাট চত্বরে অপর একটি অংশ শহরের আলাদাৎপুরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ।
ফেরিঘাট চত্বরে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম। অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোস্তফিজুর রহমান আলেক, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব মোর্সেদ জাফল, আলী হোসেন, পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তেলায়েত হোসেন, কৃষকনেতা নবীর হোসেন, যুবদল সভাপতি মশিয়ার রহমান প্রমুখ।
রংপুর থেকে এম এ সালাম বিশ্বাস জানান, দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ আর বাধার মুখে পড়েছে রংপুরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা। আজ বেলা ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত জেলা ও মহানগর বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই বাধার মুখে পড়েন।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে গ্রান্ড হোটেল মোড়ে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আসতে থাকলে তাতে বাধা দেয় পুলিশ। সেখানে আগে থেকেই রোড ডিভাইডার দিয়ে বেরিকেট বসায় পুলিশ। মিছিল আটকে দিলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় পুলিশের। একপর্যায়ে পুলিশ সালেক পাম্পের সামনে এবং গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে ব্যারিকেড দেয়।
এ সময় সালেক পাম্পের সামনে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে শোভাযাত্রা নিয়ে জাহাজ কম্পানি মোড়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ নেতাকর্মীদের লাঠিচার্জ করে। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে গ্র্যান্ড হোটেল মোড়েই সমাবেশ করে বক্তব্য দেন মহানগর আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, জেলা আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, মহানগর সদস্য সচিব আনিছুর রহমার লাকু, জেলা সদস্য সচিব মাহফুজ-উন-নবী ডনসহ নেতারা।
এ ছাড়া মানিকগঞ্জ শহরের সেওতা এলাকার খালপাড় মোড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টাধাওয়া হয়েছে। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ পাল্টা টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিক ও বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। পুলিশ এ সময় তিন জন বিএনপির কর্মীকে আটক করে।
সিরাজগঞ্জেও বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় সাত পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। আজ বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী শহরের ইবি রোডে জেলা কার্যালয় এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
অপর দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু রোড দুই নম্বর রেল গেইট এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাশেরশেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় শাওন নামের এক যুবদলকর্মী নিহত হয়েছেন। আজকের সংঘর্ষে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ ও পুলিশসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের একপর্যায়ে শাওন নামের যুবক গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নাজমুল হাসান তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।