সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের ১৩ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমানের ১৩ম মৃত্যু বার্ষিকী আজ সোমবার। ১৩ম মৃত্যু উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করবে এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ, মরহুমের পরিবার ও তাঁর রাজনৈতিক সংগঠন বিএনপি। সংশ্লিষ্টরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কর্মময় জীবনে এম সাইফুর রহমান তাঁর অনন্য গুণে মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন। তাঁর সাদামাটা জীবন মানুষের দৃষ্টি কাড়ত। ছিল না চাওয়া-পাওয়ার অস্থিরতা। এমনকি, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বিলাসিতাও পছন্দ ছিল না এই সাবেক অর্থমন্ত্রীর। দেশ-বিদেশে সব শ্রেণির মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ছিল তাঁর।
এম সাইফুর রহমান একনাঘাড়ে ১২ বার সংসদে সফলতার সঙ্গে বাজেট পেশ করেছেন। কর্মে তাঁর অনন্য গুণ। তিনি উন্নয়নের যে স্বপ্ন দেখতেন, তা বাস্তবায়নও করতেন। নিজ জন্মস্থান মৌলভীবাজারসহ পুরো সিলেট বিভাগেও রয়েছে তাঁর চোখ ধাঁধাঁনো উন্নয়নের ছোঁয়া।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
এম সাইফুর রহমান মৌলভীবাজারের বাহারমর্দনে ১৯৩২ সালের ৬ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মোহাম্মদ আব্দুল বাছির, মা তালেবুন নেছা। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন তিনি। মাত্র ছয় বছর বয়সে বাবা হারান সাবেক এই মন্ত্রী। সে সময় তাঁর অভিভাবকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন চাচা মোহাম্মদ সফি।
শিক্ষাজীবন
গ্রামের মক্তব ও পাঠশালা শেষ করে সাইফুর রহমান ১৯৪০ সালে জগৎসী গোপালকৃষ্ণ উচ্চ ইংরেরি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর ১৯৪৯ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিকুলেশনে উত্তীর্ণ হন।
সিলেটের এমসি কলেজ থেকে আই কম পাস করে ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য লন্ডনে চলে যান। সেখানে পৌঁছার পর মত পাল্টে যায় তাঁর। ব্যারিস্টারির পরিবর্তে পড়েন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি।
১৯৫৩-৫৮ সালে পড়াশোনার পর ১৯৫৯ সালে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ফেলোশিপ অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি আর্থিক ও মুদ্রানীতি এবং উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষায়িত শিক্ষা গ্রহণ করেন।
পারিবারিক জীবন
১৯৬০ সালের ১৫ জুলাই বেগম দূররে সামাদ রহমানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক। ২০০৩ সালে তার স্ত্রী ইন্তেকাল করেন। ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তার শেষ ইচ্ছানুযায়ী বাহারমর্দনে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
রাজনৈতিক জীবন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্নে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান আপন করে ডাকলে দল গঠনে অংশ নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত হন। রাজনীতিতে এলেন, আলোকিত করলেন আর আলোকিত হলেন।
১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসন ও ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ ও সিলেট-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০৬ সালের ৮ জুন তিনি সংসদে দ্বাদশ বাজেট পেশ করে দেশের সংসদীয় ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যকবার বাজেট পেশকারী হিসেবে রেকর্ড গড়েন।
তিনি দীর্ঘদিন দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন ছাড়াও দেশ-বিদেশে স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন কৃতিত্বের সঙ্গে। তাঁর জীবদ্দশায় দেশ ও বৃহত্তর সিলেট নিয়ে যে উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা করেছিলেন, তার অনেক বাস্তবায়ন হলেও পুরোটা বাস্তবায়ন করতে পারেননি।
মৃত্যু
২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এম সাইফুর রহমান মৌলভীবাজারের নিজ বাড়ি বাহারমর্দন থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার খড়িয়ালা নামক স্থানে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যুবার্ষিকীতে কর্মসূচি
১৩ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে। স্মৃতি পরিষদ ও মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর গ্রামের বাড়িতে কোরআন খতম, মিলাদ, দোয়া, শিরনি বিতরণ করা হবে।
এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ ছাড়াও দলীয়ভাবে বিএনপির স্থানীয়, উপজেলা ও জেলার নেতাকর্মীরা সকালে মরহুমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও সাড়ে ১১টায় স্মরণসভাসহ নানা কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতারা।