শিক্ষার্থীদের আর রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে আসতে হবে না : ঢাবি উপাচার্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, কোনো শিক্ষার্থীকে আর রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে আসতে হবে না। সব কাজের সেবা তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে। এখন থেকে হল কার্যালয়, ডিপার্টমেন্ট বা ইনস্টিটিউট কার্যালয় শিক্ষার্থীদের সব কাজ করবে।
আজ বুধবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে শিক্ষার্থী হয়রানি ও নানা অনিয়মের অভিযোগে ৮ দফা দাবিতে আমরণ অনশনরত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো. আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহকে পানি খাইয়ে অনশন ভাঙানোর আগে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় উপাচার্য বলেন, হাসনাত যে লাল ফিতার দৌরাত্ম্যের কথা বলেছে, সেটা এখন থেকেই আর নেই। কোনো শিক্ষার্থীর আর এই দাপ্তরিক কাজে রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে আসার প্রয়োজন হবে না। কোনো শিক্ষার্থীর আর হয়রানির শিকার হতে হবে না। হল, ইনস্টিটিউট এবং ডিপার্টমেন্ট এর কার্যালয়ে আমাদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া থাকবে। তারাই এটি দেখভাল করবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন আর রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে এসে সময় নষ্ট না করে, এই সময়টুকু যেন তারা সেমিনারে কাটাতে পারে, পড়াশোনা করতে পারে, আড্ডা দিতে পারে, লাইব্রেরিতে যেতে পারে এবং শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে এর ব্যবস্থা করা হবে। কোনো কার্যালয়ে এসে তাদের ধরনা দিয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করতে হবে না।
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান আরও বলেন, হল, বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের কার্যালয়ে গিয়ে যদি কেউ হয়রানির শিকার হয়, তাহলে হল প্রভোস্ট, বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও ইনস্টিটিউট পরিচালক সেটার ব্যবস্থা নেবে।
উল্লেখ্য, গত ৩০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দাপ্তরিক জটিলতা নিরসনে ও শিক্ষার্থী হয়রানির প্রতিবাদে ৮ দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। তখন তিনি উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি ও দাবি পূরণে ১০ কর্মদিবসের আল্টিমেটাম দেন। কিন্তু উপাচার্য বা প্রশাসন থেকে তার দাবি অনুযায়ী দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে আবারও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তিনি। এরপর গতকাল ভিসির কাছ থেকে বাস্তবায়নের আশ্বাস না পেয়ে আমরণ অনশন শুরু করেন। অবশেষে উপাচার্য নিজে এসে ২৭ ঘণ্টা পর তাঁর অনশন ভাঙান।
হাসনাত আব্দুল্লাহর আট দফা দাবিগুলো হলো-
১. শিক্ষার্থীদের হয়রানি নিরসনের জন্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অভিযোগ সেল গঠন করতে হবে। যেখানে সেবাগ্রহীতারা সুনির্দিষ্ট প্রমাণাদির ভিত্তিতে অভিযোগ জানাতে পারেন।
২. প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম অনতিবিলম্বে ডিজিটালাইজড করতে হবে।
৩. নিরাপত্তা ও হারিয়ে যাওয়া কাগজপত্র তদন্তের স্বার্থে অফিসসমূহের অভ্যন্তরে প্রতিটি রুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
৪. প্রশাসনিক ভবনে অফিস সমূহের প্রবেশদ্বারে ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করতে হবে। ডিসপ্লেতে অফিস সমূহের নাম, কক্ষ নম্বর ও সেখানে প্রদত্ত সেবার বিবরণী, কর্তব্যরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নাম ও ছবি সহ প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি প্রদর্শন করতে হবে।
৫. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনিক ভবনের ক্যান্টিনেরও সংস্কার করতে হবে।
৬. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আধুনিক সাচিবিক-বিদ্যা, পেশাদারিত্ব, মানবিক ও আচরণগত প্রশিক্ষণ আইন করে বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত মানসিক সেবা প্রদানকারী বিভাগ ও সেন্টারসমূহের শরণাপন্ন হতে হবে।
৭. অফিস চলাকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক কোনো কাজেই লিপ্ত থাকতে পারবেন না। সে নিরিখে প্রশাসনিক ভবনের অভ্যন্তরে অবস্থিত কর্মচারী ইউনিয়ন অফিস বাধ্যতামূলকভাবে তাদের ক্লাবসমূহে স্থানান্তর নিশ্চিত করতে হবে।
৮. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনকালীন প্রচারণা পরিবেশবান্ধব করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য হানিকর ও পরিবেশ বিপর্যয়কারী অপ্রয়োজনীয় পোস্টার লিফলেট ও ব্যানার ব্যবহার আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।