কোভিড মোকাবিলায় স্বাস্থ্য কৌশল প্রণয়নে নিউইয়র্কে চার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সভা
কোভিড-১৯ এর মতো ভবিষ্যৎ অতিমারি সমন্বিত ও কার্যকরভাবে মোকাবিলায় একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য কৌশল প্রণয়নের ওপর জোর দিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত কোভিড-১৯ গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান নামক পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি এ বিষয়ের ওপর জোর দেন।
কোভিড-১৯-মোকাবিলায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা জোরদার করতে বিশ্বব্যাপী অংশীদারদের একত্রিত করার প্রয়াসে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস বুয়েনো এবং বতসোয়ানার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. লেমোগাং কোয়াপে যৌথভাবে এই কোভিড-১৯ গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান মন্ত্রী পর্যায়ের সভা আয়োজন করেন। জাপান, থাইল্যান্ড, সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশ ও সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা এ সভায় অংশ নেন।
ড. মোমেন তাঁর বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোভিড ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের অসাধারণ সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এই সাফল্যের মূলে রয়েছে জীবন রক্ষার পাশাপাশি জীবিকার সংস্থান অব্যাহত রাখা, অতিঝুঁকিপূর্ণদের জন্য বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা করা এবং লাগসই প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে অতিমারির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতির দ্রুত পুনর্গঠন নিশ্চিত করা। কোভিড ব্যবস্থাপনায় অর্জিত অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে। টিকা ও অন্যান্য কোভিড সামগ্রী সহজলভ্য করতে ডব্লিউএইচওর তত্ত্বাবধানে গঠিত ও পরিচালিত এসিটি-এ এবং কোভ্যাক্স’র মতো বহুপাক্ষিক প্লাটফর্মগুলোর প্রশংসা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমন্বিত বহুপাক্ষিক উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কোভিড অতিমারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ এখনও শেষ হয়ে যায়নি মনে করিয়ে দিয়ে তিনি টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার উপর জোর দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিকাকে “বৈশ্বিক গণপণ্য” হিসেবে ঘোষণা করা এবং বৈষম্য ছাড়াই সকল দেশের মাঝে বিতরণের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি স্বাস্থ্য খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে জোর দেন এবং এ ক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে দাবি করেন। অতিমারি প্রতিরোধ, প্রস্তুতি এবং মোকাবেলার (পিপিআর) জন্য বিশ্বব্যাংকের তত্ত্বাবধানে সম্প্রতি গঠিত ফাইনান্সিয়াল ইন্টারমিডিয়ারি ফান্ডের উদ্যোগটিকে স্বাগত জানান এবং এ তহবিল কার্যকরভাবে স্বাস্থ্য খাতের চলমান বিভিন্ন বিনিয়োগের সমন্বয়কের ও পরিপূরকের ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
সভা শেষে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ এবং অগ্রগতির রূপরেখা সম্বলিত একটি যৌথ বিবৃতি জারি করা হয়। বিবৃতিতে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় কোভিড-১৯ গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যানের ছয়টি মূল কর্মপরিকল্পনার আলোকে গৃহীত পদক্ষেপসমূহের হালনাগাদ অগ্রগতি এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সমন্বয় বাড়াতে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকার উপর আলোকপাত করা হয়। এ ছাড়া, মহামারি চূড়ান্তভাবে মোকাবেলায় অবশিষ্ট পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করতে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের স্বাস্থ্য হুমকি প্রতিরোধ করতে আরও উন্নত ও কার্যকরী স্বাস্থ্য সুরক্ষা কাঠামো তৈরিতে গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যানের অংশীদারদের সমন্বিত প্রয়াস চলমান রাখার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।