দিনাজপুরে ২০টি সিনেমা হলের মধ্যে চালু একটি
দিনাজপুর সদরসহ ১৩টি উপজেলায় মোট ২০টি সিনেমা হল থাকলেও বর্তমানে চালু রয়েছে মাত্র একটি। সেটিও আবার যে কোনো সময়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বাপ-দাদার পুরোনো ব্যবসা হওয়ার কারণে অনেকেই লোকসান দিয়ে এই ব্যবসা চালু রেখেছেন। কিছু সিনেমা হল কেবল দাঁড়িয়ে আছে পুরোনো ঐতিহ্য নিয়ে।
জানা গেছে, ২০০৩ সাল পর্যন্ত সিনেমা হলগুলোর ব্যবসা মোটামুটি ভাল ছিল। হলগুলোতে ঈদে ঢাকার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে নতুন নতুন ছবি চালানো হতো। দর্শকও ছিলো প্রচুর। এরপর সিনেমা হলগুলোর দর্শক কমতে থাকে।
দিনাজপুর সদর উপজেলায় বোস্তান, লিলি, মর্ডান, চৌরঙ্গী ও জুয়েল নামের মোট পাঁচটি সিনেমা হল ছিলো। দর্শক কমে যাওয়ায় একে একে এই সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে দিনাজপুর সদরে মডার্ন সিনেমা নামে মাত্র একটি সিনেমা হল চালু রয়েছে। তাও আবার বন্ধ হয়ে যেতে পারে যে কোনো সময়ে। ৬৫ বছর থেকে ৫৫ বছরের পুরোনো সিনেমা হলগুলোর অবস্থা এখন জীর্ণশীর্ণ।
দিনাজপুর জেলায় মোট ২০টি সিনেমা হল ছিল। যা প্রায় বলতে গেলে সবগুলি বন্ধ হয়ে গেছে। বোস্তান সিনেমা হল ভেঙ্গে একটি বিশাল মার্কেট করা হয়েছে। লিলি সিনেমা হল ভেঙ্গে অত্যাধুনিক শপিং কমপ্লেক্স তৈলী হয়েছে। চৌরঙ্গী ও জুয়েল সিনেমা হল এখন ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, ১৯৬৭ সালের দিকে বোস্তান ও লিলি সিনেমা যাত্রা শুরু করেছিলো। এর পর ১৯৫৭ সালে মর্ডান ও চৌরঙ্গী সিনেমা হল নির্মাণ করা হয়। দিনাজপুর জেলার ২০টি সিনেমা হলকে কেন্দ্র করে গেটম্যান, টিকিট কাউন্টারের লোক, প্রচারের লোক এবং আশেপাশের হোটেল ও পান দোকানসহ প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের জীবন চলতো। এদের সবাই এখন পেশা বদলে অন্য পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করেছেন।
দিনাজপুর মডার্ন সিনেমা হলের স্বত্ত্বাধিকারী ও সিনেমা হল মালিক সমিতির সদস্য এস এম পারভেজ বলেন, ‘কিছু নোংরা ছবির কারণে দর্শকরা সিনেমা হল বিমুখ হয়েছেন। তাদের আর ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। আগে পরিবার নিয়ে সবাই এক সাথে সিনেমা দেখতে আসতো। এখন আর সেই সংস্কৃতি নেই। সেই সংস্কৃতি আমরা ভুলতে বসেছি।’
পারভেজ বলেন, ‘বলিউডের ছবি এক সময় দেশের হলগুলোতে চালানোর জন্য সরকার অনুমতিও দিচ্ছিলো। কিন্তু শিল্পী সমিতি ও প্রযোজকদের বাধা ও আন্দোলনের মুখে তা বাতিল হয়ে যায়। ফলে সিনেমা হলের সুদিন আর ফিরে আসেনি।’ তাঁর মতে যাদের একাধিক ব্যবসা আছে তারাই কেবল পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে লোকসান দিয়ে হল চালু রেখেছেন।
এসএম পারভেজ আরও বলেন, ‘আগে অভিনয় দিয়ে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা দর্শকদের মন জয় করতো। কিন্তু বর্তমানে শিল্পীরা তা পারছেন না।’