বিটিআরআই স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক পাচ্ছেন না পাওনা টাকা
শ্রীমঙ্গল বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের অবসরকালীন পাওনা টাকা দীর্ঘদিন ধরে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে হয়েছেন নানান বিড়ম্বনা ও মানহানিকর পরিস্থিতির শিকার। এবার সেই টাকার দাবিতে ওই প্রবীণ শিক্ষক শাহ আলম আজ রোববার করেছেন সংবাদ সম্মেলন। দুপুরে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক শাহ আলমের সঙ্গে ছিলেন তার জামাতা আরিফুর রহমান ও শ্যালক আহসানউল্লাহ ভূঁইয়া।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক শাহ আলম বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৮ বছর অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষকতা করে অবসর গ্রহণ করেছি। অবসর শেষে আমার গ্রাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য বিধি মোতাবেক পরিচালক (স্কুল সভাপতি) বরাবর আবেদন করি। কর্তৃপক্ষ বিধি মোতাবেক প্রকৃত পাওনা না দিয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো সামান্য অর্থের (৪ লাখ টাকা) চেকের প্রাপ্তিস্বীকারপত্রে সই করতে বলেন। এই টাকা গ্রহণে আমি অপারগতা প্রকাশ করি। এরই প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ আমাকে পূর্বের দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাসা ছাড়ার নির্দেশ দেন।’
শাহ আলম আরও বলেন, ‘পরিচালক আমার বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে চা বোর্ডের সচিবকে ফোনে কথা বলে জানান যে, আবেদনকারী শিক্ষক টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। তখন চা বোর্ডের সচিব বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করে আমাকে বাসা থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে নির্দেশ দেন। দীর্ঘ চাকরি জীবনের প্রাপ্য পাওনা না পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অসৌজন্য আচরণে গভীরভাবে বেদনাহত হলাম, যা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি।’
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক শাহ আলম আরও বলেন, ‘আমি গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর আমার পাওনাদির জন্য আবেদন করি। যেহেতু, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে চা বোর্ড পরিচালিত হয় এবং চা বোর্ডের অধীনে বিটিআরআই স্কুল পরিচালিত হয়। আমার আবেদনটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সাদরে গ্রহণ করেন এবং চা বোর্ড কর্তৃপক্ষকে বিধি মোতাবেক পাওনা পরিশোধের জন্য (চেয়ারম্যানকে) নির্দেশ দেন। এটা বলার পরও সংশ্লিষ্ট চা বোর্ডের সচিব এ ব্যাপারে কোনো প্রকার ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো আমাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ অশালীন আচরণ করে চলেছেন। এটা জানার পরও স্কুলের পরিচালক কোনো মন্তব্য করেননি।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শাহ আলম বলেন, ‘বিধি মোতাবেক আমার পাওনা মোট টাকার পরিমাণ প্রায় ৪০ লাখ। ইতিপূর্বে বিধি মোতাবেক টাকা পেয়েছেন প্রধান শিক্ষক মরহুম শামসুল ইসলাম, সহকারী প্রধান শিক্ষক হরিপদ সরকার, গোস্বামী, দিজেন্দ্রলাল সিংহ, গৌরীবালা গোপ ও তাসলিমা আক্তার। তারা যদি বিধি মোতাবেক তাদের ন্যায্য পাওনা পেতে পারেন, তবে আমি কেন পাবো না?’
ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশের ব্যাপারে প্রবীণ এই শিক্ষক বলেন, ‘গত ২৯ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় বিটিআরআই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আফরোজা বেগমের কক্ষে বিটিআরআই পরিচালক ড. ইসমাইল হোসেন, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, স্টোরকিপার মুকুল রায়, বিদ্যালয়ের হিসাবরক্ষক হাবিব বাহার চৌধুরী ও বিটিআরআইয়ের হিসাবরক্ষক সাইফুল কাদের উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আমার বিষয়টি নিয়ে চা বোর্ডের সচিব রুহুল আমিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন বিটিআরআই পরিচালক ইসমাইল হোসেন। কথোপকথনের একপর্যায়ে চা বোর্ডের সচিব নির্দেশ দেন আমার বাসার বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে।’