টঙ্গীতে ১৪ ঘণ্টায় তিন খুন
গাজীপুরের টঙ্গীতে পৃথক ঘটনায় নারীসহ তিনজন খুন হয়েছেন। আজ সোমবার ১৪ ঘণ্টায় মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন মরকুনের হাতেম কারখানা, টঙ্গী বাজার ও শৈলারগাতী এলাকায় এসব খুনের ঘটনা ঘটে।
টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম ও স্থানীয়রা জানায়, সেলসম্যানের ধারাল অস্ত্রের আঘাতে তাঁর বন্ধু একটি দোকানের কর্মচারী নিহত হয়েছেন। টঙ্গী বাজারের মা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে এ ঘটনা ঘটে। মিষ্টির ওই দোকানে কারিগর হিসেবে কাজ করতেন মোস্তফা কামাল (২৪)। একই দোকান থেকে মিষ্টি নিয়ে সেলসম্যান হিসেবে ঢাকার বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করতেন খায়রুল ইসলাম বুলবুল (৪৫)। বন্ধুত্বের সম্পর্কের কারণে তাঁরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায়ই দুষ্টুমি করতেন।
গতকাল রোববার রাত ৮টার দিকে দুষ্টুমি করার সময় সেলসম্যান খাইরুলের বিরুদ্ধে পঁচাবাসি মিষ্টি বিক্রির কথা বলেন মোস্তফা। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় খাইরুল উত্তেজিত হয়ে দোকানে থাকা ছুরি দিয়ে মোস্তফার ঘাড়ে আঘাত করেন। এতে গুরুতর আহত হন মোস্তফা।
দোকানের অন্যান্য কর্মচারীরা এসময় মোস্তফাকে রাজধানী একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে মারা যান মোস্তফা কামাল।
খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত খায়রুলকে আটক করে।
নিহত মোস্তফা কামাল ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার বরুকা নয়নবাড়ী গ্রামের আব্দুল কাদের মণ্ডলের ছেলে এবং গ্রেপ্তার হওয়া খায়রুল ইসলাম বুলবুল বগুড়ার সদর থানার ছোট বেলাইল এলাকার মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে।
এদিকে, টঙ্গী পূর্ব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাব্বির হোসেন জানান, মহানগরীর মরকুন এলাকার হাতেম ফ্যাক্টরির সিলেটিং সেকশনের ভেতর থেকে আজ সকালে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আনুমানিক ৩৪-৩৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির মাথায়, পিঠে ও পেটে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। রোববার রাতে কাজ শেষে কারখানা ছুটি হলে শ্রমিকরা কারখানা ত্যাগ করে। শ্রমিকরা চলে যাওয়ার পর রাতে কারখানার বাইরে শুধু সিকিউরিটি গার্ড দায়িত্বরত ছিলেন। আজ সকালে কারখানায় কাজে যোগ দিতে এসে কয়েক শ্রমিক ওই মরদেহ দেখতে পেয়ে ৯৯৯-এ সংবাদ দেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই মরদেহ উদ্ধার করে।
অপর ঘটনায় ওই থানার এসআই সুমন খান জানান, টঙ্গীর শৈলারগাতী এলাকায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নেওয়ার পরের দিন (আজ) জান্নাতি খাতুন ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস (১৮) নামে এক নারীর গলায় ওড়না পেঁচানো মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে তাঁর স্বামী দেলোয়ার হোসেন জব্বার ওরফে জালাল পলাতক রয়েছেন।
এ ব্যাপারে বাড়ির মালিক ইয়াছিন মিয়া জানান, বাড়ির তৃতীয় তলায় বাসা ভাড়া নিয়ে গতকাল রোববার রাত ১১টার দিকে স্ত্রী জান্নাতি খাতুন ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌসকে নিয়ে ওঠেন দেলোয়ার হোসেন জব্বার ওরফে জালাল। আজ দুপুরের পর বাড়ির বাহির থেকে জালাল ফোন দিয়ে জানান, তাঁর স্ত্রীর কী যেন হয়েছে। তাঁকে গিয়ে যেন সাহায্য করা হয়।
এ সংবাদের ভিত্তিতে প্রতিবেশীরাসহ গিয়ে গলায় ওড়না পেঁচানো জান্নাতির মরদেহ বিছানার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
এসআই সুমন খান আরও জানান, নিহত জান্নাতি বগুড়া জেলার শেরপুর থানার ধনকুণ্ডি গ্রামের মো. আরিফ শেখের মেয়ে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে তাঁর স্বামী জালাল।
টঙ্গী পূর্ব থানা ওসি আশরাফুল জানান, পৃথক তিনটি ঘটনায় নিহত তিনজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।