আ.লীগের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে : মির্জা ফখরুল
আওয়ামী লীগ সরকারের দেশ শাসনের কোনো অধিকার নেই জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ। অবিলম্বে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। ভালোয় ভালোয় সরে পড়েন। নইলে দেশের জনগণ জানে কীভাবে সরাতে হয়। দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে আওয়ামী লীগের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এক প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সারা দেশে ধরপাকড়, মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার, জামিন বাতিল করে নেতাকর্মীদের কারাগারে প্রেরণ, পুলিশি হামলা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকায় এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের চলমান আন্দোলনের মূল লক্ষ্য এই সরকারের গণবিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে আমাদের আন্দোলন। সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন। আমরা বলতে চাই আমাদের যেসব সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন তাদের রক্ত ও আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যাবে না। আমরা তাদের হত্যার মধ্য দিয়ে এই দানবীয় আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ চাই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অবিলম্বে মিথ্যা মামলা ও গুলি করে মানুষ হত্যা বন্ধ করেন। ইতিহাস ভুলে যাবেন না। দেশের মানুষ কাউকে ক্ষমা করেনি। দেওয়ালের লিখন পড়ুন। সাধারণ মানুষের মনের ভাষা বুঝতে শিখুন। আজকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বেশি কেনো।
তিনি বলেন, সরকার সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। তারা মানুষের টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করছে। আর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বিদ্যুৎ আছে পাবেন। কিন্তু আমাদের তো চলে না। দিনে পাঁচ ছয় বার লোডশেডিং হয়। মানুষ অতীষ্ঠ। দেশের কলকারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কলকারখানা বন্ধ হলে লাখ লাখ কর্মী বেকার হবে। আজকে তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের অবসরে পাঠাচ্ছে।
অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের আর দেশ শাসনের কোনো অধিকার নেই। ভালোয় ভালোয় পদত্যাগ করে সরে পড়ুন। নইলে দেশের মানুষ জানে কীভাবে সরাতে হয়। অবিলম্বে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।
আমান উল্লাহ আমান বলেন, যেখানেই বাধা সেখানেই সমাবেশ। ১০ ডিসেম্বর ঢাকা হবে সমাবেশের শহর। হাসিনা কতো বাধা দিবেন? হাসিনার দিন শেষ। আর এক মুহূর্তও এই সরকারকে কেউ দেখতে চায় না। আমাদের দাবি এখন একটাই সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ। পুলিশ ও প্রশাসনকে বলবো আপনারা নিরপেক্ষ থাকুন। কারণ হাসিনা আর নেই। শেখ হাসিনার অধীনে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না এবং হতে দেওয়া হবে না।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মো. আবদুস সালাম বলেন, খেলা শুরু হয়ে গেছে। আর আওয়ামী লীগ হাবুডুবু খাচ্ছে। আওয়ামী লীগ লেজ গুটিয়ে দৌড় দিছে। তাদেরকে এখন তারেক রোগে পাইছে। তারেক রহমান দেশে এলে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আসন্ন দুর্ভিক্ষ থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ৫ জনকে হত্যা করেছেন। প্রয়োজনে বুক পেতে দিবো। কিন্তু আপনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। যারা সমাবেশে যাওয়ার আগেই বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। তাদের কালো তালিকা করা হবে। আমরা অনেক সহ্য করেছি আর নয়। আমরা যেকোনো ত্যাগ শিকারে প্রস্তুত। দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে আওয়ামী লীগের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মো. আব্দুস সালাম। ঢাকা দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্য সচিব মো. আমিনুল হকের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নেতা আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুইয়া, জয়নুল আবদীন ফারুক, মীর সরফত আলী সপু, নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, তাবিথ আউয়াল, কৃষকদলের হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও আব্দুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী ও রাজীব আহসান, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের মো. আব্দুর রহিম, শ্রমিক দলের হুমায়ূন কবির খান, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।
দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন ঢাকা মহানগরীর থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। কয়েক হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে জড়ো হওয়ায় ফকিরাপুল মোড় থেকে কাকরাইলের নাইটিংগেল মোড় পর্যন্ত সড়কের দক্ষিণ দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিলো। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই এলাকায় মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ।