গম আমদানির বিকল্প উৎস খুঁজছে সরকার
বাংলাদেশ গম আমদানি করতে বিদেশি বিকল্প উৎস খোঁজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের কারণে দুই দেশ থেকে গম আমদানির পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য গমের চাহিদা মেটাতে এ পদক্ষেপ নিতে চলেছে সরকার।
মন্ত্রণালয়ের খাদ্য আমদানির তত্ত্ববধানের দায়িত্বে নিয়োজিত একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে আমরা রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে কোনো গম পাচ্ছি না। এমন এক পরিস্থিতিতে আমাদের বেসরকারি খাতে নতুন উৎস খুঁজতে হচ্ছে, এমনকি তাতে দাম কিছুটা বেশি দিয়ে হলেও।’
মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত বেসরকারি আমদানিকারকরা বুলগেরিয়া, রোমানিয়া এমনকি, রাশিয়া থেকেও সাড়ে ছয় লাখ টন গম আমদানির জন্য চুক্তি করেছে এবং এসব চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত তিন দশমিক ১৩ লাখ টন গম পেয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘বাকি গম এই বছরের ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ আসবে।’
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বার্ষিক গড় গম উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ (এক মিলিয়ন) টন এবং বার্ষিক চাহিদার পরিমাণ ৭৫ লাখ টন। গমের বাকি চাহিদা আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়, যার ৬২ শতাংশ আসে রাশিয়া, ইউক্রেন এবং ভারত থেকে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারতও তাদের গম রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে।
যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া বিশ্বে গম রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল, কিন্তু পরে সাময়িক নীতিগতভাবে এই বিধিনিষেধ শিথিল করলে বাংলাদেশ এর অধীনে চলতি বছরের মে মাসে এক লাখ টন গমের একটি চালান পেয়েছিল। সর্বশেষ মে মাসে ৪৬ হাজার ৬৫৫ টন ইউক্রেনীয় গম পায় বাংলাদেশ।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, তারপর থেকে কোনো দেশ থেকে কোনো গম পাওয়া যায়নি।
কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক মাস ধরে গমের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে আসছে। যার ফলে আটাসহ বেকারি আইটেমগুলোর দামও বাড়ছে।
খাদ্য কর্মকর্তারা বলেন, রুশ এবং ইউক্রেনীয় গম অনেক কম দামে রপ্তানি করা হতো এবং যখন ভারত এটি সর্বনিম্ন দামে সরবরাহ করত। তবে, পরিস্থিতি বাংলাদেশকে কানাডাসহ অন্যান্য দেশে গমের সন্ধান করতে বাধ্য করেছে।
গতকাল ৯ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন গমের গড় দাম ছিল ৩৫৩ দশমিক ৬৭ মার্কিন ডলার, যা ২০২১ সালের দিকে ২৫৮ দশমিক ৬৮ ছিল।
গম আমদানীকারকরা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এদিকে, বাংলাদেশি মুদ্রার মান হ্রাস পাওয়ায় সংকটটিকে আরও গভীর করে তুলেছে।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক সংকটময় মুহূর্তে যেকোনো ধরনের মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার অভ্যন্তরীণ খাদ্য সরবরাহ বাড়াতে খাদ্য আমদানি বাড়িয়ে ও খাদ্য সংগ্রহ করাসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।’ তিনি বাসসকে আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ খাদ্য আমদানি ও স্থানীয় খাদ্য সংগ্রহ কার্যক্রম বাড়িয়ে, খাদ্য সংকট মেকাবিলা করতে প্রস্তুত রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতি এখন একটি মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে।’
সাধন চন্দ্র বলেন, ‘উৎপাদনের দিক দিয়ে দেশের দ্বিতীয় প্রধান প্রজাতির ধান আমনের উৎপাদন প্রত্যাশার চেয়েও ভাল হয়েছে। ক্ষেতের পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী মাস থেকে ধান কাটা শুরু হবে।’
অধিক উৎপাদনের কারণে বাংলাদেশ মূলত বোরো ধানের ওপর নির্ভরশীল। এটি বাংলাদেশের প্রধান উৎপাদিত ধান। এই ধান সংগ্রহ করার হয় এপ্রিল ও জুন মাসের মধ্যবর্তী সময়ে এবং রোপন করা হয় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির গোড়ার মধ্যবর্তী সময়ে। দেশের মোট উৎপাদিত ধানের ৫৫ শতাংশ আসে বোরো ধান থেকে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে, আমরা বিদেশে থেকে গমের পাশাপাশি ধান সংগ্রহের ওপরও জোর দিয়েছি। এ ছাড়াও মুনাফার আশায় মজুতদারির বিরুদ্ধে আমরা আমাদের নজরদারি বৃদ্ধি করেছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যেন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কৃত্রিমভাবে খাদ্য সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সে লক্ষ্যে সারা দেশের বিভিন্ন খাদ্য বাজারে নজরদারি বাড়াতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে বেশ কয়েকটি নজরদারি দল গঠন করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘খাদ্য মজুদ বাড়াতে সরকার ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ দশমিক ৫০ লাখ টন ইতোমধ্যেই পৌঁছে গেছে এবং অবশিষ্ট চার দশমিক ৫০ লাখ টন চাল বছরের শেষ নাগাদ পৌঁছে যাবে।’
খাদ্য কর্মকর্তারা বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, আমদানি দ্রুতগতিতে হ্রাস পেয়েছে।’