ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বাগমারা দুধের হাট
কাছ দিয়ে হেঁটে গেলেই বাতাসে মেলে দুধের মিষ্টি ঘ্রাণ। খুব সকালে তার আশপাশ দিয়ে দেখা যায় দুধের ড্রাম নিয়ে সাইকেল, রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশায় ছুটছেন কেউ না কেউ। জানা যায়, এরা সবাই খামারি। থামবেন বাগমারা বাজারে। বাজারটি কুমিল্লার লালমাই উপজেলায়। এ বাজারে যুগ যুগ ধরে বসছে দুধের হাট।
হাটে প্রতিদিন ভোরে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ক্রেতাদের মিলন মেলা হয়। এখানে খামারিরা প্রতিদিন বিক্রি করেন প্রায় ১২ হাজার লিটার দুধ। দুধ বিক্রি করে নগদ টাকা পান। নগদ টাকা পেয়ে খুশি মনে বাড়ি ফেরেন তাঁরা।
খামারিরা জানান, উপজেলার পেরুল উত্তর, দক্ষিণ, ভোলাইন উত্তর-দক্ষিণ, বাগমারাসহ পাঁচ ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার খামারি দুধেল গরু পালন করেন। তারা উৎপাদন করেন প্রায় ১২ হাজার লিটার দুধ। বড় খামারি অনেকে সরাসরি কুমিল্লা ও লাকসামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুধ বিক্রি করেন।
মাঝারি ও ক্ষুদ্র খামারিরা বাগমারা বাজারে এনে পাইকারদের কাছে দুধ বিক্রি করেন। এখানে ১৫ থেকে ২০ জন পাইকার দুধ সংগ্রহ করেন।
বেশি দুধ আসে লালমাই উপজেলার সিলোনিয়া, হাজতিয়া ও বাগমারা বাজারের আশপাশের গ্রাম থেকে। আমুয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম এনেছেন ২৪ লিটার দুধ। নগদ দাম পেয়ে তিনি খুশি। লিটারপ্রতি খামারিরা পান ৫০ টাকা। কখনো বাজার পড়ে যায়। প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হয় লিটার ৩০ টাকায়। এতে তাদের লোকসান হয়।
নুরুল ইসলাম বাজার স্বাভাবিক রাখার আবেদন জানান।
বাজারের পাইকার দৌলতপুর গ্রামের মনির হোসেন জানান, এখানে তিনি আট বছর ধরে দুধ সংগ্রহ করেন। আজ ৫০ টাকা ধরে দুধ সংগ্রহ করেছেন। বিক্রি করবেন ৪৮ টাকা লিটার দরে। তিনি প্রতিদিন এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ লিটার দুধ সংগ্রহ করেন। এ বাজারে এরকম ১৫ থেকে ১৬ জন পাইকার দুধ সংগ্রহ করেন।
সিলোনিয়া গ্রামের আজিজ ডেইরি ফার্মের পরিচালক ও জেলা ডেইরি মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল আজিজ বলেন, ‘বাগমারা বাজারে কয়েক যুগ থেকে দুধের হাট বসে। আমরাও প্রথমে এখানে দুধ বিক্রি করতাম। এখন নিজেরা কুমিল্লায় সরাসরি সরবরাহ করি। বাকিটা দই ও মিষ্টি তৈরির কাজে লাগাই। এ ছাড়া কুমিল্লার সুয়াগাজী, চকবাজার, বুড়িচং বাজারে দুধের পাইকারি বাজার রয়েছে। শীতে ও ভারী বর্ষায় গরুর দুধের চাহিদা কম থাকে। সে সময় দাম কমে যায়। দুধের নতুন বাজার ও সংরক্ষণ করা গেলে খামারিরা উপকৃত হবে।’
এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন পয়েন্টে দুধ সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি, একটি প্রকল্পের মাধ্যমে খামারিদের পাশে দাঁড়াতে পারব।’