মেট্রোরেলে উঠতে যা করতে হবে আর টিকেট পাবেন যেভাবে
রাজধানীতে আগামীকাল বুধবার থেকে চালু হবে স্বপ্নের মেট্রোরেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করবেন, হবেন প্রথম যাত্রীও। আর উদ্বোধনী যাত্রায় ট্রেনটি চালাবেন একজন নারী চালক, যার নাম মরিয়ম আফিজা। এর মধ্য দিয়ে দেশের গণপরিবহণে যুক্ত হবে বৈদ্যুতিক যানবাহন, যা দেশের সাধারণ মানুষের কাছে একেবারেই নতুন। উদ্বোধন উপলক্ষে এরই মধ্যে শেষ হয়েছে সবধরনের প্রস্তুতি। যদিও যানজটমুক্ত চলাচলের পুরো সুযোগ পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও একবছর। তারপরও রাজধানীবাসীর মনে বইছে আনন্দ।
২০১২ সালে প্রকল্প হাতে নিয়ে দশ বছরের মাথায় চালু হচ্ছে এই মেট্রোরেল। যদিও প্রথম ধাপে আগামীকাল উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধনের পর সাধারণ যাত্রীদের কাছে টিকেট বিক্রি শুরু হবে। প্রথম টিকেটটি কিনবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাধারণ যাত্রীরা পরের দিন (২৯ ডিসেম্বর) থেকে চড়তে পারবেন এই মেট্রোরেলে। আপাতত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কোনো স্টেশনে না থেমেই চলাচল করবে মেট্রোরেল। তবে আগামী বছরের ২৬ মার্চ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সবগুলো স্টেশনে নিয়মমাফিক থেমে থেমে যাত্রীদের সুবিধার্থে চলাচল শুরু হবে।
এ ছাড়া আগামী বছর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এবং ২০২৩ সালের মধ্যে চালু হবে মতিঝিল থেকে কমলাপুর সম্পূর্ণ মেট্রোরেল প্রকল্প। মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনই তিনতলা। প্রথমতলা পেরিয়ে দ্বিতীয় তলায় রয়েছে কর্মকর্তাদের অফিস কক্ষ, টিকেট কাউন্টার ও ওয়েটিং রুম। এখান থেকেই টিকেট সংগ্রহ করতে হবে।
গন্তব্যে যাতায়াতের জন্য টিকেট কাটার দুটি পদ্ধতি রয়েছে—সিঙ্গেল বা একক ও পারমানেন্ট। টিকেট সংগ্রহের আগে যাত্রীকে প্রথমে মনিটরে ভাষা নির্বাচন করতে হবে। ইংরেজি ও বাংলা দুটি ভাষা রয়েছে, যে ভাষায় আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন সেটা নির্বাচনের পর একক বা পারমানেন্ট (এমআরটি পাস) নির্বাচন করতে হবে।
এরপর আসবে গন্তব্যের তালিকা। কোন স্টেশন পর্যন্ত কত ভাড়া সে তালিকা থাকবে। সেখান থেকে যাত্রীকে গন্তব্য স্টেশন নির্বাচন করতে হবে। এরপর কয়টি টিকেট সংগ্রহ করবেন সে তালিকা আসবে। এরপর প্রয়োজনীয় টিকেট, গন্তব্য স্টেশন নির্বাচন করে ‘ওকে’ বাটনে টাচ করলেই মেশিন টাকা দিতে বলবে। টাকা দেওয়ার পর টিকেট বা এমআরটি পাস বেরিয়ে আসবে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করে মেট্রোরেলের টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। একজন যাত্রী একবারে পাঁচটির বেশি টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন না।
অন্যদিকে, এমআরটি পাস পদ্ধতিতে একটি স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে যতবার খুশি যাতায়াত করা যাবে। তবে, সেক্ষেত্রে কার্ডটি সময়মতো রিচার্জ করে রাখতে হবে। ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করে নিতে পারবেন।
প্রত্যেক মেট্রো স্টেশনে থাকা টিকেট ভেন্ডরের মেশিনের মাধ্যমেই রিচার্জ করা যাবে। টিকেট সংগ্রহ করে যেতে হতে তৃতীয় তলায়। যাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে তিন ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে প্রতিটি স্টেশনে। সিঁড়ি, এস্কেলেটরের পাশাপাশি বয়স্ক ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য রাখা হয়েছে লিফট।
দ্বিতীয় তলা থেকে টিকেট সংগ্রহ শেষ করে সিঁড়ি বা লিফটের মাধ্যমে পৌঁছাতে হবে তৃতীয় তলায়। টিকেট চেকইনের বিষয়টি দ্বিতীয় তলাতেই শেষ করা হবে। টিকেট চেক হবে ডিজিটাল উপায়ে। যদি কেউ না পারেন তাহলে নিরাপত্তাকর্মীরা যাত্রীদের সহযোগিতা করবেন।
তৃতীয় তলাতেই মেট্রোর মূল প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মে নির্দিষ্ট সময় পর পর ট্রেন এসে থামবে। অটোমেটিক দরজা খুলে যাবে। যাত্রীরা নামবেন, আপনি উঠবেন। গন্তব্য স্টেশনে ট্রেন থামবে যাত্রীরা নেমে এমআরটি পাস পাঞ্চ করলেই দরজা খুলে যাবে এরপর বেরিয়ে যেতে পারবেন। সিঙ্গেল এন্ট্রির কার্ডে ভ্রমণের মেয়াদ একবার। আর দশ বছর মেয়াদি কার্ডের যাত্রীরা বার বার ভ্রমণ করতে পারবেন। ভ্রমণের দূরত্বে ভাড়া অনুযায়ী অটোমেটিক টাকা কেটে নেবে।