এতিমখানার সরকারি অনুদানের চেক বিতরণে ঘুষ দাবির অভিযোগ
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় সরকারি নিবন্ধনপ্রাপ্ত এতিমখানাগুলোতে অনুদানের চেক বিতরণে উপজেলা সমাজসেবা অফিসের সহকারী জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধ ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
উপজেলার রতনপুর এতিমখানার মুহতামিম ও শিক্ষক মাজহারুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার এতিমখানার এতিমদের জন্য ২০২২ সালে পাঁচ লাখ টাকার সরকারি বরাদ্দ অনুমোদন হয়। এই টাকার চেক উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে এতিমখানায় হস্তান্তরের কথা। কিন্তু উপজেলা সমাজসেবা অফিসের সহকারী জামাল উদ্দিন চেক বিতরণের জন্য ২৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন।’
মাজহারুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ঘুষ দিতে অপারগতা জানালে আমাকে হয়রানি করাসহ বেশ কয়েকদিন ঘুরানো হয়। অবশেষে অফিস সহকারী জামাল উদ্দিন ২০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে এতিমখানার পাঁচ লাখ টাকার অনুদান বরাদ্দের চেক হস্তান্তর করেন। আমি এ ব্যাপারে সুবিচার চেয়ে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।’
সমাজসেবা দপ্তরের নিবন্ধনপ্রাপ্ত উপজেলার আরও দুটি এতিমখানার শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, জামাল উদ্দিন উপজেলার ১৭টি এতিমখানার মুহতামিমের প্রায় সবার কাছ থেকেই সরকারি অনুদানের চেক বিতরণে এবং এতিমখানার পরিচালনা কমিটি অনুমোদনের নামে প্রকাশ্যেই ঘুষবাণিজ্য করে থাকেন। তার এই অনিয়ম সম্পর্কে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে একাধিকবার বলেও কোনো কাজ হয়নি।
এতিমখানার বেশ কয়েকজন মুহতামিম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা তার কাছে নিরুপায় হয়ে আছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রাজুল ইসলাম বলেন, ‘জামাল উদ্দিনের ঘুষ-দুর্নীতির কথা জানতে পেরে ইতোমধ্যে জামাল উদ্দিনকে সতর্ক করা হয়েছে। এতেও কোনো কাজ না হওয়ায় তাকে বদলির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। দেখি কর্তৃপক্ষ কী সিদ্ধান্ত নেয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও পরিমল কুমার সরকার সাংবাদিকদের জানান, তিনি এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দিনাজপুর জেলা সমাজসেবা দপ্তরের উপপরিচালকের কাছে অভিযোগটি পাঠিয়ে দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর জেলা সমাজসেবা দপ্তরের উপপরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক সাংবাদিকদের জানান, তিনি অভিযোগটি পেয়েছেন। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিনাজপুর জেলা সমাজসেবা দপ্তরের সহকারী পরিচালক (কার্যক্রম) মুনির হোসেন জানান, তিনি এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত করে জেলা সমাজসেবা দপ্তরের উপপরিচালকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
স্থানীয় সাংবাদিকরা অভিযোগ পেয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসের সহকারী জামাল উদ্দিনের কাছে অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে জানতে চান। এ সময় তিনি কোনো জবাব না দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে অফিস থেকে বেরিয়ে যান। পরে সাংবাদিকরা তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাননি। এদিকে এতিমখানায় সরকারি অনুদানের চেক বিতরণে ঘুষবাণিজ্যের বিষয়টি নিয়ে এলাকার জনসাধারাণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনা চলছে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার এ ব্যাপারে যোগসাজশ রয়েছে কি না, তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।