জোবায়ের মিলনের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ঘনসাপের দেউড়ি’
কবি জোবায়ের মিলন ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তাঁর গ্রন্থের পটভূমির। কবিতায় বলেছেন, ‘জলে ও স্থলে—হাঙ্গর,/ ওঁত পাতা স্বদেশী সজারুও,/বন চষে নাশপাতির বৃক্ষ উপড়ে নিয়েছে বনরাক্ষস;/ গেওয়া, গোলপাতা কিছুই নেই তার আপন আয়নায়,/ রমণীয় লোকালয়ও হিস্ হিস্ শব্দের সঙ্গী।/অলৌকিক চাঁদ, যে জ্যোৎস্নার লাবণ্যে সুলগ্ন হতো/ সে’ও বেওয়ারিশ তারার তা-বে তোলপাড়,/ মাখন দুপুরগুলো সন্ধ্যার সান্নিধ্যে সজ্জিত সোহাগ/ বেহেলার তার ছিঁড়ে ছন্নছাড় সামিয়ানা/ মিঠাই ঘাটের সুবর্ণ সন্ন্যাস—পাইকারি ইজারাদার!/পূণ্যপরাগ গলা চাঁদ চুষে রাত্রিরা বাউরি বাতাস।’ (বাউরি বাতাস)।
ঠিক পরের কবিতাটিতেই আবার বলেছেন, ‘আমাদের বিপর্যয়ের ক্যালেন্ডারের পাতায় একটি দিন ইয়াসমিনের,/ একটি দিন নুরজাহানের,/ একটি দিন ফারহানার,/ একটি দিন মিতুর. . ./ এভাবে তনু-মীম-বিউটি-অরিত্রী-নুসরাত-আফসানা আর সুবর্ণচর হয়ে / আমাদের সময়ের নাম হয় কুর্মিটোলা;/ মৃত্যুশয্যায় থাকা পৃষ্ট-জীবনের পৃষ্ট-বুক থেকে উঠে আসে শেষ উচ্চারণ—/ এ কোন সময় পেরিয়ে যাচ্ছি আমরা?/ আমাদের চোখের পাতায় জ্যান্ত পুড়ছে কোলের সন্তান/ আমাদের চোখের পাতায় জিঘাংসায় খন্ডিত হচ্ছে প্রিয় গান/ আমাদের চোখের পাতায় হাওয়ায় নাই হয়ে যাচ্ছে আমাদের ঊর্বিটান;/ খুনে, ধর্ষণে,/ বেবিচারে ছিন্নভিন্ন হচ্ছে বুকের পাকা ধান/ এ কোন্ সময়/ এ কোন সময় পেরিয়ে যাচ্ছি আমরা?’ (এ কোন সময়)।
একইভাবে সন্নিবেশিত হয়েছে—আমরাও কম শুয়োর নই, এ ধ্বনি মৃতের, বিষধর পন্নগ, অনার্য সময়, গ্রীষ্ম জার্নাল, ব্লু-হোয়েল, কুতুব মিনার ইত্যাদি নামের কবিতা।
এখানের প্রতিটি কবিতাই গ্রন্থশিরোনামের অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। যদিও প্রতিটি কবিতার আলাদা করে একটি শিরোনাম রাখা হয়েছে কিন্তু তা নামমাত্র। মূলত প্রচল ব্যাধিপূর্ণ আবহে অবিশ্বাস্য হলেও বিশ্বাস্য বাস্তবতাকে অবলোক ও আত্মস্থ করে অব্যক্ত বক্তব্যটা ভাষারূপ নির্মাণের মাধ্যমে অসুন্দরের বিপরীতে সুন্দরের আকাঙ্ক্ষাই বর্ণিত হয়েছে সুতীব্র ভঙ্গিতে।
গত বইমেলায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘স্বৈরাচারী দুঃখ ও বিবিধ’র সুন্দর সাফল্যের পর এটি তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। প্রচ্ছদ করেছেন সাদিতউজজামান। গায়ের মূল্য ২২৫ টাকা। বইটি অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৩-এ প্রকাশ-ঘর পেন্সিল পাবলিকেশনসের স্টল নং-৩০০-তে পাওয়া যাবে।