হাইকোর্ট বললেন ‘আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে’
রাজশাহীর বাগমারার বাইগাছা এলাকায় ৫০টি তালগাছে কীটনাশক প্রয়োগ করে মেরে ফেলার ঘটনায় শুনানিকালে হাইকোর্ট বলেন, ‘আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে। একটা পশুরও তো মায়া থাকে! এটাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।’ শুনানির একপর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘আইন-আদালত দিয়ে দেশের কোটি-কোটি মানুষকে ভালো করা সম্ভব না, যদি না আমরা নিজেরাই মানবিক ও সচেতন না হই।’
এ সংক্রান্ত এক শুনানিকালে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) এ মন্তব্য করেন। এর আগে তালগাছ মেরে ফেলার অভিযোগে সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ারকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।
শুনানিতে কীটনাশক দেওয়ার ফলে গাছগুলোর করুণ চিত্রের ছবি দেখে হাইকোর্ট বলেন, ‘আপনারা হয়তো মনে করবেন যে তালগাছের মত ছোট্ট একটা বিষয়ও হাইকোর্ট দেখে? হ্যাঁ, আমাদের দেখতে হয়। কারণ, সুপ্রিম কোর্টকে বলা হয় জাগ্রত বিবেক। আমরা তাল গাছগুলোতে বিষ দেওয়ার সংবাদ দেখে আহত হয়েছি। একটা গাছ বড় হতে ১২-১৪ বছর সময় লাগল। আর সেই গাছগুলোর ডাল কেটে বিষ দিয়ে দেওয়া হলো! একটা পশুরও তো মায়া থাকে! বিষ দেওয়া তালগাছগুলোর ছবি দেখে আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে।’
এর আগে রাজশাহীর বাগমারার বাইগাছা এলাকায় ৫০টি তালগাছ মেরে ফেলার জন্য কীটনাশক প্রয়োগের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শাহরিয়ার আলমকে তলব করেন হাইকোর্ট। আজ রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশমতো হাজির হলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখেন আদালত। সে ধারাবাহিকতায় শাহরিয়ার আলম আজ হাইকোর্টে হাজির হয়ে তালগাছের বিষয়ে তার ব্যাখ্যা আদালতে দাখিল করেন। সেখানে তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে আদালত আজকের শুনানির শুরু থেকে বিকেলে কোর্ট নেমে যাওয়ার আগ পর্যন্ত শাহরিয়ার আলমকে দাঁড় করিয়ে রাখেন। এদিকে বাগমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাইকোর্টে হাজির হয়ে এ ঘটনায় তাদের সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন ছবিসহ দাখিল করেন।
পরে আদেশে হাইকোর্ট আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর বাগমারা প্রতিনিধিকে তালগাছের সংবাদ সংক্রান্ত কথোপকথনের রেকর্ডসহ হাইকোর্টে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেন। আর এ বিষয়ে করা জিডির পরিপ্রেক্ষিতে আইনগত কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা ওইদিন হাইকোর্টে হাজির হয়ে জানাতে বাগমারা ওসির প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। সেইসাথে শাহরিয়ার আলমকে ২৩ ফেব্রুয়ারি আবার হাইকোর্টে হাজির থাকতে বলা হয়। আর এ সংক্রান্ত সংবাদটির সত্যতা নিশ্চিতের হলফনামা আদালতে দাখিলের জন্য সময় দিয়ে পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ‘৫০ তালগাছে কীটনাশক, দোষীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ কেন নয়’ শিরোনামে গত ৩১ জানুয়ারি জাতীয় একটি দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদটি নজরে নিয়ে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১ ফেব্রুয়ারি স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন।
ওইদিন আদালত তার আদেশে রাজশাহীর বাগমারার বাইগাছা এলাকায় ৫০টি তালগাছ মেরে ফেলার জন্য কীটনাশক প্রয়োগের অভিযোগে উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি শাহরিয়ার আলমকে তার ব্যাখ্যা দিতে ১২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে তলব করেন। এ ছাড়া বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কৃষি কর্মকর্তা যৌথভাবে সরেজমিন তদন্ত করে গাছগুলোর ছবিসহ প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।