সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদা আর নেই
চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা (ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে নাজমুল হুদার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি স্ত্রী ও ২ মেয়ে অন্তরা ও শ্রাবন্তীসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এনটিভি অনলাইনকে নাজমুল হুদার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তাঁর একান্ত সচিব আক্কাস খান জানান, নাজমুল হুদা লিভার সমস্যায় ভুগছিলেন। দুই-তিন দিন ধরে হাসপাতাল ভর্তি ছিলেন।
নাজমুল হুদা ২০১২ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের সময় তিনি দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। এরপর তিনি ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে সম্প্রতি তার নিবন্ধন পান।
১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান জাগো দল গঠন করলে নাজমুল হুদা জাগো দলে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠিত হলে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন এবং তিনি ছিলেন দলের সর্বকনিষ্ঠ স্থায়ী কমিটির সদস্য। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন।
১/১১ পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে তিনটি দুর্নীতির মামলা হয়েছিল। ২০১০ সালে ২১ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। বহিস্কার হলেও বিএনপির দলীয় কাজ করতে থাকেন এবং ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল তার সদস্য পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অবশেষে ২০১২ সালে ৬ জুন নাজমুল হুদা বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন।
১০ আগস্ট ২০১২ সালে নাজমুল হুদা ও আবুল কালাম মিলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। কিন্তু কয়েক মাস পরের আবুল কালাম কর্তৃক বিএনএফ থেকে বহিষ্কার হন। ২০১৪ সালের ৭ মে মাসে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জোট নামে একটি জোট গঠন করেন এবং ২১ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি নামে দল গঠন করেন। ২০ নভেম্বর ২০১৫ সালে হুদা তৃণমূল বিএনপি নামে আরও একটি নতুন দল গঠন করেন।
নাজমুল হুদা আইনজীবী ব্যারিস্টার সিগমা হুদাকে বিয়ে করেন। এ দম্পতির দুই সন্তান অন্তরা সামিলা ও শ্রাবন্তী আমিনা।
২০০৭ সালে ২১ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হুদাকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করে, যখন তিনি ২০০১-২০০৬ সময়ে যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন। একজন ব্যবসায়ী মীর জহির হোসেনের কাছ থেকে ৩০ কোটি টাকার সরকারি কাজের চুক্তির বিনিময়ে ঘুষ হিসাবে ২.৪০ কোটি টাকা নিয়েছিলেন, এমন অভিযোগের মামলায় ২৭ আগস্ট তাকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আপিলের ভিত্তিতে, হাইকোর্ট ২০ মার্চ ২০১১ তাকে অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছিল। কিন্তু ১ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ খালাস বাতিল করে দেয়।
২০১৭ সালের ৮ নভেম্বর, হাইকোর্ট কারাদণ্ডের মেয়াদ ৪ বছরে কমিয়ে দেয়। সুপ্রিম কোর্ট জানুয়ারি ২০১৮ সালে এই মামলার হুদাকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন। আত্মসমর্পণের পর, হুদাকে ৭ জানুয়ারি ২০১৯ সালে কারাগারে পাঠানো হয়। ২১ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় তাঁকে জামিন দেন।
২০০৭ সালে ২৭ জুলাই গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, একজন বিএনপির রাজনীতিবিদ এবং ক্যাব এক্সপ্রেস লিমিটেডের মালিক হুদা এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ২০০৩ সালে দুটি মারুতি গাড়ির জন্য চাঁদাবাজি করার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। ঢাকার একটি আদালত, ১২ জুন ২০০৮ এই মামলায় হুদাকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়। কিন্তু ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে তাকে খালাস দেন।
২০০৮ সালে ৩ এপ্রিল সম্পদের তথ্য গোপন করা এবং অবৈধভাবে সম্পদ আহরণের অভিযোগে হুদাকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একটি আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে, হাইকোর্ট, ২০১০ সালের আগস্টে, এই মামলা থেকে তাকে খালাস দেয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে বেকসুর খালাস রায় বাতিল করেন।
এছাড়া ২০০৮ সালে ১৮ জুন দুদক হুদা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে একজন ঠিকাদারের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা করে। ২০১৬ সালে হাইকোর্ট মামলাটি বাতিল করলেও ২০১৭ সালে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করেন। একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ জুলাই ২০১৯ হাইকোর্ট দুদককে ৪ মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে বলে।
৯ জানুয়ারি ২০২০, দুদক হুদা এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে প্রায় ৬.৭৩ কোটি টাকা পাচারের জন্য দুটি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে। এসব অভিযোগে ১০ মার্চ তাদের জামিন দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি, দুদক হুদার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনার জন্য একটি মামলা দায়ের করেন।