মাতৃভাষায় শিক্ষাগ্রহণ কেন জরুরি?
বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ বাঙালির অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
প্রতি বছরই মাতৃভাষা দিবসের একটি নির্দিষ্ট থিম থাকে। ইউনেস্কো অনুযায়ী, ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের থিম হল: ‘বহুভাষিক শিক্ষা—শিক্ষাকে রূপান্তরিত করার প্রয়োজনীয়তা।’ জাতিসংঘের মতে, বিশ্বব্যাপী ৪০ শতাংশ জনসংখ্যা যে ভাষায় কথা বলে বা বোঝে সে ভাষায় শিক্ষাগ্রহণ করতে পারছে না। বিশেষ করে, আদিবাসী বা ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠী। তাই এর গুরুত্ব অনুধাবনের প্রয়োজনে মাতৃভাষাভিত্তিক বহুভাষিক শিক্ষায় অগ্রগতি করা প্রয়োজন। ভাষাগত বৈচিত্র্য ক্রমবর্ধমানভাবে হুমকির মুখে পড়েছে কারণ বেশ কয়েকটি ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ভাষা। শিশু থেকে প্রবীণ সবাই মনের ভাব প্রকাশে মাতৃভাষা ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। একটি শিশু যদি স্কুলে গিয়ে অন্য একটি ভাষা শুনে থাকে, তখন তার মধ্যে শব্দের সামঞ্জস্য রক্ষা করার দক্ষতা কমে যায়। প্রতিটি শিশুর ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। পরিবারের গণ্ডিতে তিন থেকে চার বছর একটি শিশুটি লালিত হয়। সে ভাষাটি স্কুলেও পেলে শিক্ষক ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে তার মনের ভাবগুলো অনায়াসেই প্রকাশ করতে পারবে।
জীবনের প্রাথমিক স্তরে মাতৃভাষায় শিক্ষাগ্রহণ করা উচিৎ। এতে শিশুর মস্তিষ্কে সৃজনশীলতার বীজ বোনা শুরু হবে। মাতৃভাষা এমন একটি হাতিয়ার, যা একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বাঁচিয়ে রাখতে পারে। পাঠ্যক্রমগুলোতে মাতৃভাষার দারুণ প্রয়োগ দেখা যায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। জাপান, জার্মানি, ও ফ্রান্স। বিভিন্ন চড়াই-উৎড়াইয়ের পরেও দেশ গঠনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের মাতৃভাষা প্রয়োগ থেকে বিরত থাকেনি। বরং, সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাব্রত পালন করতে এই দেশগুলোতে ভীড় জমানোর সময় তাদের মাতৃভাষা শেখায় গুরুত্ব দেয়।
কাজেই শুরুটা হোক মাতৃভাষায়। আমরা অন্য বিদেশি ভাষা অবশ্যই শিখব। এতে আমাদের কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু আগে নিজের মাতৃভাষাটা ভালো করে শিখে নেই। বিদেশি ভাষা বয়কট নয়; বরং বিশ্ব দরবারে মাতৃভাষাকে সমুন্নত করে মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করতে হবে।
সূত্র- ইউএনবি