ট্রান্সমিটার থেকে তার ছিঁড়ে বিস্ফোরণ, হারাতে হলো শিশু আরিশার বাঁ হাতের কবজি
ছয় বছরের ফুটফুটে ছোট্ট শিশু আরিশা আক্তার। রাজধানীর পল্টনের নিজ বাসা থেকে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালের দিকে বাবা-মায়ের সঙ্গে রাজারবাগের কদমতলায় তার নানার বাসায় বেড়াতে যায়। সেদিন দুপুর ২টার দিকে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় আরিশা।
ব্যালকনির গ্রিলে আরিশা বাঁ হাত রাখতেই হঠাৎ বিকট শব্দে আগুনে ঝলসে যায় তার হাত ও মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ। এ সময় আগুনের ফুলকিও দেখা যায়। এতে ভয় পেয়ে যান পরিবারের সবাই।
সঙ্গে সঙ্গে আরিশার বাবা আরমান আক্তার ব্যালকনিতে যান। গিয়ে দেখেন, আরিশা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। এরপর তিনি আবিষ্কার করেন, ভবন সংলগ্ন বিদ্যুতের হাইভোল্টেজ ট্রান্সমিটার থেকে তার ছিঁড়ে পড়ায় অন্য তারের সঙ্গে লেগে শর্টসার্কিট হয়। এতে বিস্ফোরণ ও গ্রিলে বিদ্যুদায়ন ঘটে।
পরক্ষণে আরিশাকে নেওয়া হয় রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসক জানান, আরিশার বাঁ হাতের কবজি কেটে বাদ দিতে হবে। শিরার রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো সেল কাজ করছে না। কারণ ‘হাইভোল্টেজ শকে’ আরিশার হাতের কবজি একেবারেই ঝলসে গেছে।
আজ শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আরিশার মা তামান্না আক্তারের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। কথা প্রসঙ্গে আরিশার মা বলেন, ‘ওর দু-হাতই পুড়ে যেত। ভাগ্য ভালো, আরিশা রান্না ঘর থেকে ডান হাতে করে একটি লেবু নিয়ে খেতে খেতে ব্যালকনিতে যায়। হাতে লেবু না থাকলে হয়তো দু-হাতই ব্যালকনিতে দিত। আমার ছোট্ট একটি মেয়ে। কী যে যন্ত্রণায় কাটছে ওর।’
তামান্না আক্তার বলেন, ‘শেখ হাসিনা বার্নে নেওয়ার পর চিকিৎসক বলেছিলেন, অপারেশন করতে যত দেরি করবেন; তত অসুবিধা হতে পারে। ইনফেকশনটা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়লে বড় ক্ষতি হবে। এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে আরিশাকে শেখ হাসিনা বার্ন থেকে মোহাম্মদপুরের সিটি হাসপাতালে ভর্তি করি। হাতের কবজি না কাটার সব রকমের চেষ্টা আমরা করেছি। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত কাটতেই হলো। সিটি হাসপাতালে নেওয়ার পর অপারেশন করে হাতের কবজি কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে।’
আরিশার মা আক্ষেপ করে বলেন, ‘ব্যালকনি ঘেঁষে অনেক বৈদ্যুতিক তার। যেকেনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ দুর্ঘটনা ঘটার পর আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু, সেই তার সেভাবেই রয়েছে। এখনও সরানো হয়নি।’
তামান্না আক্তার আরও বলেন, ‘আরিশা এ জি চার্চ স্কুলে কেজি শ্রেণিতে পড়ে। আমার মেয়ের মুখ-গলাসহ শরীরের অন্যান্য অংশ পুড়ে গিয়েছিল। এখন সব চামড়া ওঠে যাচ্ছে। ঘা শুকিয়ে যাচ্ছে। এখন অবস্থা ভালোর দিকে। তবে, হাসপাতাল থেকে কবে ছাড়া পাব জানি না।’