উধাও মা-বাবাকে যেভাবে খুঁজে পেল এক মাসের শিশু
উধাও মা-বাবাকে নয় দিন পর খুঁজে পেয়েছে এক মাসের সেই শিশু। জামালপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এক মাস বয়সী নিশিকে ফেলে রেখে উধাও হয়ে যান তার মা-বাবা। আজ বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) তাকে মা-বাবার কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মা-বাবা ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্ম হয় নিশির। জন্মের পর তার ওজন কম ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। পরে তার মা ও নানি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসকের পরামর্শে তার চিকিৎসা চলে। শিশুটির চিকিৎসা চলাকালে তাদের কাছে থাকা টাকা-পয়সা শেষ হয়ে গেলে শিশুটির মা ও নানি টাকা জোগাড় করতে এক মহিলার কাছে তাকে রেখে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। পরে তিনি শিশুর মা ও নানিকে না পেয়ে হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্সদের বিষয়টি জানান। তারা শিশু নিশির ওজন কম ও শ্বাসকষ্ট দেখে তাকে হাসপাতালের শেখ রাসেল বিশেষায়িত সেবাকেন্দ্রে ভর্তি করান। কয়েক ঘণ্টা পর টাকা জোগাড় করে শিশুটির মা ও নানি হাসপাতালে ফিরে আসেন। কিন্তু পরে শিশু নিশিকে না পেয়ে তারা বাড়ি ফিরে যান।
গত ৬ মার্চ জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা চলাকালে শিশু নিশির মা-বাবা হাসপাতালে আসেন তাকে ফেরত নিতে। কিন্তু সে সময় তাঁদের কথা ও হাসপাতালের ভর্তির তথ্যে অমিল দেখা যায়। তাই শিশু কল্যাণ বোর্ডে সিদ্ধান্ত হয় প্রয়োজনীয় তদন্ত করে আসল মা-বাবার কাছে শিশু নিশিকে ফেরত দেওয়া হবে। পরে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে বিষয়টির তদন্ত করে। তাদের তদন্তে রোকসানা ও আব্দুল কাদের জিলানী রকিব দম্পতিই শিশু নিশির আসল মা-বাবা বলে নিশ্চিত হয়। পরে শিশু নিশিকে রোকসানা-রকিব দম্পতির কাছে হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শিশু নিশিকে রোকসানা-রকিব দম্পতির কাছে হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান সোহান, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাজু আহাম্মেদ, শিশু কল্যাণ বোর্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর সেলিম, মেডিকেল অফিসার ডা. তারিকুল ইসলাম রনি প্রমুখ।
এ সময় শিশু নিশিকে কোলে ফিরে পেয়ে মা রোকসানা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, মেয়েকে না পেয়ে তাঁর অনেক কষ্ট হয়েছে। অনেক কান্না-কাটি করেছেন। অনেক জায়গায় ঘুরেছেন। অবশেষে তাকে ফিরে পেয়ে তিনি অনেক খুশি।
শিশুটির বাবা আব্দুল কাদের জিলানী রকিব বলেন, ‘ওই সময় আমি ঢাকায় ছিলাম। মেয়ে হারিয়ে গেছে শুনে বাড়ি ফিরে আসি।’
শিশু কল্যাণ বোর্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘শিশুকে সঠিক মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ আলোচনা সভায় সিদ্ধান্ত হয় তদন্ত করে আসল মা-বাবা শনাক্ত করে তাদের হাতে শিশুটিকে তুলে দেওয়া হবে। পরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের তদন্তে প্রমাণিত হয় রোকসানা-আব্দুল কাদের জিলানী রকিব দম্পতিই ওই শিশুর সঠিক অভিভাবক।’
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান সোহান বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে শিশুটিকে তার মা-বাবার কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে। শিশুটির মা-বাবার এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এবং তদন্ত করে আজ শিশুটিকে তার মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হলো।’