বাংলালিংকে ‘গোলমাল’
কর্মী অসন্তোষের মুখে পড়েছে দেশের অন্যতম টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় ‘টাইগার্স ডেন’-এ চলছে আন্দোলন। পুলিশের ভাষায় প্রতিষ্ঠানটিতে ‘গোলমাল’ চলছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি যাতে না হয়, সেজন্য তারা সেখানে অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কারণ উল্লেখ না করেই আজ রোববার দুপুর ২টার দিকে একটি মেইল দিয়ে ‘আজকের জন্য’ সব কার্যালয় বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।
‘ম্যানেজমেন্ট টিম’ পরিচয়ে পাঠানো মেইলে দ্রুত কার্যালয় প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয় বাংলালিংকের কর্মীদের।
হঠাৎই কার্যালয় বন্ধ হওয়ার ঘোষণার ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলালিংকের জনসংযোগ ও যোগাযোগ বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক অঙ্কিত সুরেকা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। তা আজও চলছিল। এ কারণে আজকের জন্য কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলালিংকে কর্মচারী ইউনিয়ন গঠন নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়া মাত্রই গত বৃহস্পতিবার এক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করে বাংলালিংক। এরই প্রতিবাদের অংশ হিসেবে আজ রোববার কর্মকর্তারা সকাল থেকেই জড়ো হতে থাকেন গুলশানের টাইগার্স ডেনে।
বাংলালিংকের একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, সকাল থেকেই কার্যালয়ের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ ব্যাপারে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সকাল থেকেই ওই কার্যালয়ের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ওদের অভ্যন্তরীণ গোলমাল আছে। যেন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়ে সে কারণে সেখানে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে।’
বাংলালিংকের কর্মকর্তাদের একজন উজ্জ্বল পাল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কোনো কারণ না দেখিয়েই এক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আমরা বলেছিলাম, অফিস চলাকালে আমরা কোনো কর্মসূচি পালন করব না। সে কারণে আমরা আজ রোববার সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কর্মসূচির জন্য সময় রাখি। গতকাল ১১টার পর এক নোটিশে আজ কার্যালয়ের সময় সাড়ে ৮টা করে দেওয়া হয়, যেন আমরা কোনোভাবে জড়ো হতে না পারি। এখানে সারাদিন ধরে পুলিশ পাহারা রাখা হয়েছে, এমনকি ডগ স্কোয়াডও নিয়ে আসা হয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একজন জানান, ইউনিয়ন নিয়ে সোচ্চার থাকার কারণে আরো এক কর্মচারীকে আজ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারান। ওই কর্মকর্তা বর্তমানে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অসন্তোষের নেপথ্যে
বাংলালিংকের কর্মকর্তারা একটি ইউনিয়ন গড়ার প্রক্রিয়ায় ছিলেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গত ৭ ফেব্রুয়ারি শ্রম অধিদপ্তরে আমরা নাম জমা দেই। ওই দিনই বিষয়টি আমরা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর জানাই। গত ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলালিংকের মানবসম্পদ বিভাগ বরাবর বিষয়টি জানাই আমরা। এ রকম যখন প্রক্রিয়া চলছিল তখন হঠাৎ করেই আমাদের এক সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়।’
কর্মকর্তারা জানান, গত ১১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার শেষ কার্য সময়ে আমাদের ওই সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা জানান, তিনি বাংলালিংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার একেবারে শেষ সময়ে আমাকে ডাকা হয় এবং আমার হাতে চাকরিচ্যুত হওয়ার চিঠি দেওয়া হয়। আমার পরিচয়পত্রও নিয়ে নেওয়া হয়। আমাকে জানানো হলো, প্রতিষ্ঠান চাইলে যেকোনো সময় যেকোনো কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করতে পারে। আমি বলি, কোনো নিদিষ্ট কারণ আছে কি না। তাঁরা কোনো কারণ দেখায়নি আমাকে।’